ড.জাবেদ পাটোয়ারীর নতুন মিশন, আরও ‘সুদৃঢ়’ করতে চান বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ককে!

প্রকাশিতঃ 10:26 am | September 06, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
সাফল্যময় জীবনের সিঁড়ি বেয়েছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশ প্রধান হিসেবে ২ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের টাটকা স্মৃতি জ্বলজ্বল। ওই সুখস্মৃতিটিই তাঁর গোটা জীবনের জন্যই অনুপ্রেরণার।

দায়িত্ব পালনকালের এ সময়টিতে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে পুলিশকে অনন্য এক উচ্চতায় মেলে ধরেছিলেন।

নেতৃত্বে মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর রাখায় ‘সন্তুষ্ট’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভান্ডারের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ লড়াকু এই তুর্কিকেই নতুন অ্যাসাইমেন্টে পাঠিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর দেশ সৌদি আরবে।

সেখানে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে। স্বভাবতই নতুন কর্মস্থলে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়েই পূর্ণোদ্যমে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

চলতি বছরের ২২ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েই ‘ছক’ কষে কাজও শুরু করে দিয়েছেন ড.জাবেদ। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতেই স্থির করেছেন নিজের নতুন লক্ষ্য।

জনশক্তি, শিক্ষা ও কৃষির পাশাপাশি বাংলাদেশে সৌদি আরবের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক সর্ম্পক স্থাপনের মাধ্যমেই সাফল্যে রাঙানো নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করতেই নতুন রাষ্ট্রদূত ড.জাবেদ পাটোয়ারী সম্ভবত নিজেকে ব্যস্তও রাখতে চান ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’।

এরই মধ্যে দিয়ে নিজের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগাধ আস্থার মর্যাদাও রক্ষা করতে চান পুলিশ প্রধান থেকে এ কূটনীতিক।

তিনি নিজেও মনে করেন, ‘বাংলাদেশিদের হৃদয়ে সৌদি আরবের বিশেষ জায়গা রয়েছে। আর এ বিষয়টি কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক উপনীত হবে নতুন উচ্চতায়।’

সম্প্রতি সৌদি আরবের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নতুন রাষ্ট্রদূত ড.জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দু’টি পবিত্র মসজিদের কাস্টোডিয়ান কিং সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি সরকারের কিংডম ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযাত্রী হতে হতে চায় বাংলাদেশ।

একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তেও প্রবল আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যেতে চাই।

সৌদি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে ‘অনুকূল’ গন্তব্য হিসেবেই কেবল প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন বুনেননি।

পাশাপাশি সৌদি আরবের রূপকল্প ২০৩০ এবং বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মীদের নির্ভরযোগ্য একটি ব্র্যান্ড হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করাই নিজের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেন ড.জাবেদ।

নিজের দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি নেতৃত্বের প্রতি বাংলাদেশের উদার এবং অব্যাহত সহায়তার জন্য ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নিজেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হৃদয়ের মর্মমূল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়েছেন।  
 
ড.জাবেদ পাটোয়ারী সৌদি আরবের সেই গণমাধ্যমকে আরও বলেছেন, ‘সহযোগিতার সব সম্ভাব্য ও অপঠিত ক্ষেত্রের পুরো ব্যবহারের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চাই।’

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্রত নিয়ে রাষ্ট্রদূত ড.পাটোয়ারী বলেন, ‘দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।’

ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আগামী দিনের মধ্যে দু’টি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেও পুনরায় জোর দেন এ রাষ্ট্রদূত।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী এবং চমৎকার ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উপনীত হবে।’

এক নজরে ড.জাবেদ পাটোয়ারী
মেধাবী, সৎ ও চৌকস পুলিশ প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তাঁর বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি পুলিশে যোগ দেন। তিনি ষষ্ঠ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন।

তিনি বাংলাদেশ পুলিশে ৩৫ বছর সম্মান ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড.জাবেদ সমাজকল্যাণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকালে মহান জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবনের ওপর লেখা গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ড.জাবেদ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার তাঁর দায়িত্ব পালনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ড.জাবেদ পাটোয়ারী ২৯ তম পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ‘জনবান্ধব’ পুলিশিং গড়তে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সফল হন। পুলিশে চাকরি বাণিজ্যের রাশ টেনে ধরেন।

তাঁর সময়ে দু’টি কনস্টেবল নিয়োগে মেধা ও যোগ্যতার নিরিখেই চাকরির নতুন রেকর্ড গড়ে পুলিশ।

২০১৮ সালের বহিরাগত এসআই (নিরস্ত্র) পদে ২ হাজার ও ২০১৯ সালে বহিরাগত ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) পদে ১ হাজার ৪০২ জনকে নিয়োগ প্রদানেও স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রশংসিত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বেশ কয়েক দফা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব নিয়োগকে ‘উদাহরণ’ হিসেবে অন্যদের অনুসরণ করারও নির্দেশ দেন।

ড.জাবেদ পাটোয়ারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সুদান, কসোভো, সিয়েরালিয়ন ও ক্রোয়েশিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন এবং জাতিসংঘের পদক অর্জন করেন।

তাঁর কর্মগুণে মুগ্ধ হয়েই প্রধানমন্ত্রী তাকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন।  

কালের আলো/এমকে/এমএএএমকে