হত্যার দায় স্বীকার করেছে মিন্নি এমন কথা বলিনি: এসপি মারুফ
প্রকাশিতঃ 9:09 pm | July 18, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে- বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন বলেছেন, রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এমন কোনো কথা আমি বলিনি।
তিনি বলেন, একজন আসামি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আমি এ কথা বলতে পারি না। আমাকে কেউ কোট করে যদি নিউজ করে তবে তা ঠিক করেনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে এসপি মারুফ এসব কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার(১৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান এসপি মারুফ। এরপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিন্নির দায় স্বীকারের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, মিন্নিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় রিফাত হত্যায় তার জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে মিন্নিকে ফের আদালতে তোলা হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে মিন্নিকে তার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। বেশ কয়েকঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিন্নিকে ওইদিন রাতে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে একটা ফোন!
এদিকে রিফাত হত্যাকান্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হওয়ার পর বেড়িয়ে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগে সোমবার হেলাল নামে একজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় রিফাত শরীফ। এই হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল। সেই মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য মিন্নি যায় নয়ন বন্ডের কাছে।
পরে কসরত করে রিফাতের কাছ থেকে ফোন উদ্ধার করে মিন্নি। এজন্য রিফাত মিন্নির গায়েও হাত তোলে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ডের আগেরদিন নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই মোবাইল নয়নের কাছে পৌঁছে দেয়। এসময় মিন্নি মার খাওয়ার কথা নয়নকে জানিয়ে প্রতিশোধ নিতে নয়নকে মারধর করতে বলেন। মারধরের সময় ঘটনাস্থলে নয়ন যেন না থাকে সেটাও মিন্নি নয়নকে বলে। এরপরই সেদিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিং করে রিফাত শরীফকে মারধরের সব পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি সেরে ফেলে আলোচিত বন্ড বাহিনী।
রিফাত শরীফের ওপর হামলার আগ মুহূর্তে রিফাতকে নিয়ে মিন্নি কলেজ থেকে বের হয়। বেরিয়ে দেখে বাইরে রিফাতকে মারধরের কোনো প্রস্তুতি নেই। পরে সময় কাটাতে আবার দুজনে কলেজে ঢুকে যান।
এর কিছুপরেই বন্ড বাহিনীর কয়েকজন সদস্য এক হয়ে রিফাতকে ধরে মারতে মারতে কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে পূর্বদিকে নিয়ে যায়। আর মিন্নি তখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাতকে মারধর করছিল তারা।
তবে পরিকল্পনার বাইরে নয়ন বন্ড রিফাতকে মার শুরু করলে মিন্নি তখনই এগিয়ে আসে। মিন্নি রিফাতকে নয়, মারধরের অভিযোগ থেকে নয়নকে বাঁচাতেই বারবার ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার এই হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও নিহত ব্যক্তির স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গতকাল বুধবার আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
কালের আলো/এআর/এনএল