শোলাকিয়ায় মুসল্লীদের দৃঢ়তায় হার মানলো বৃষ্টি

প্রকাশিতঃ 1:16 pm | June 05, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া থেকে :

আকাশের মতিগতি দেখে অনেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ছাতা। তাঁরা খানিক সময়ের জন্য সৌভাগ্যবান হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

আবার অনেকেই এসেছিলেন খালি হাতেই। মুসল্লীরা যখন মাঠে প্রবেশ করছেন ঠিক তখনই অঝোর ধারায় নেমে এলো বৃষ্টি। হুলোস্থুল বাঁধিয়ে দিলেন অনেকেই! কিন্তু কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জো নেই।

ফলে সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন বৃষ্টিতে ভিজেই আদায় করবেন ঈদের নামাজ। শেষতক হলোও তাই। মুসল্লীদের অমিত দৃঢ়তার কাছে হার মানলো বৃষ্টির দাপট। বুধবার (০৫ জুন) সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অন্যতম বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে ১৯২ তম এ ঈদ জামাতে ইমামতি করতে দেশের বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবীদ আল্লাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ হেলিকপ্টারে পৌঁছতে বিলম্বে করায় সকাল ১০ টার পরিবর্তে ২৫ মিনিট পর শুরু হয় দেশের বৃহৎ এ ঈদ জামাত।

এদিকে, এ ঈদ জামাতকে ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

দেখা যায়, ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে সকাল ৭ টা থেকেই শোলাকিয়ায় আসতে শুরু করেন মুসল্লীরা। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা এখানে এসে জড়ো হন।

কিন্তু ভোর সকাল থেকেই মুখ ভার করে আকাশ। থেমে থেমে হয় বৃষ্টি। এমন অবস্থা চলে সকাল ৯ টা পর্যন্ত। ঈদের জামাত বিলম্বে শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টির হানায় ভিজে কাক হয়ে নামাজ আদায় করতে হয় তাদের।

আরো দেখা যায়, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদ জামাতে আগত মুসল্লীদের তল্লাশি করে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয়। তবে এ নিয়ে কারো মনে কোন ক্ষোভ দেখা যায়নি। উল্টো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মাঠের চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। এখানে রেওয়াজ মোতাবেক নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শর্টগানের গুলি ছুঁড়া হয়। এর মাধ্যমে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

ঈদের জামাত শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ও দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ঈদগাহে অনেক শিশুই বাবা’র হাত ধরে ময়দানে আসে।

ময়মনসিংহ থেকে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে আসা সংবাদকর্মী আবু সালেহ মো: মূসা কালের আলোকে জানান, কখনো শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়া হয়নি।

অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল এখানে ঈদ জামাতে অংশ নেওয়া। আজ সেই মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে। দেশ ও জাতির শান্তির জন্য আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করেছি।

নরসিংদী সদর থেকে আসা সালাহউদ্দিন (৪০) কালের আলোকে বলেন, প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় করলাম। অথচ কতোদিন স্বপ্ন দেখেছি শোলাকিয়ায় দেশের প্রধান ঈদ জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করবো।

অবশেষে আল্লাহ প্রার্থনা কবুল করেছেন। এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য হয়েছে।

একই রকম কথা বলেন সিরাজগঞ্জ থেকে আসা হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে নামাজ পড়ে দেহ-মনে প্রশান্তি অনুভব করছি। এখন থেকে নিয়ত করেছি প্রতি ঈদেই এখানে নামাজ আদায় করার।

কালের আলো/এএ