ইসির সংলাপে যা বললেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা

প্রকাশিতঃ 3:40 pm | October 06, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

যেকোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সুধীজনদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নাসির উদ্দিন কমিশনও বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে।

নাসির উদ্দিন কমিশন প্রথম দফায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও দ্বিতীয় দফায় আজ (সোমবার) ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে সংলাপ করছে। দিনব্যাপী এই সংলাপে প্রথম ভাগে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বিতীয় দিনের এই সংলাপে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দেন। এছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এআই-এর অপব্যবহার রোধ, আস্থা অর্জন এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সংলাপে বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতির কাছে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গণমাধ্যমের সহযোগিতা ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়।

তিনি এআই-এর অপব্যবহার রোধে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আরও জানান, প্রবাসী, নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ও সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হবে এবং আয়নার মতো স্বচ্ছ করে নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেন। এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো—

ডিবিসি নিউজের লোটন একরাম, দীপ্ত টিভির এস এম আকাশ, এটিএন বাংলার একরামুল হক সায়েমসহ অনেকেই সাংবাদিকদের জন্য বর্তমান নীতিমালা সংশোধন করে ভোটকেন্দ্রে অবাধে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

এস এম আকাশ মূলধারার মিডিয়াকে অবাধ বিচরণের সুযোগ দিতে বলেন। একাত্তর টিভির শফিক আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

একরামুল হক সায়েম অনিয়ম হলে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলার ও ইন্টারভিউ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোস্তফা আকমল এআই ব্যবহার করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেন। আনন্দ টিভির জয়নাল আবেদিন ও সিইসিও এআই-এর অপব্যবহার রোধে গুরুত্ব দেন।

গ্লোবাল টিভির ফেরদৌস মামুন এবং বৈশাখী টিভির জিয়াউল কবীর সুমন ভোট গণনার সময় দীর্ঘ হলেই সন্দেহ তৈরি হয় উল্লেখ করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো রোধ করার পরামর্শ দেন।

শফিক আহমেদ নির্বাচন কমিশনের স্ট্যাটাস বাড়িয়ে মন্ত্রীর উপর মর্যাদা দেওয়ার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।

যমুনা টিভির তৌহিদুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ও আমলাদের কোনো পক্ষের না হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে বলে মত দেন। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

গ্রীন টিভির মাহমুদ হাসান ভোটে অনিয়ম করলে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। সময় টিভির জহুরুল ইসলাম জনি অনিয়মের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।

এটিএন নিউজের শহিদুল আজম, নিউজ ২৪-এর শরিফুল ইসলাম খান, স্টার নিউজের ওয়ালিউর রহমান মিরাজসহ অনেকেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন।

জিটিভির গাউসুল আজম বিপু সাধারণ মানুষ যেন ভোট দিতে আসে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং ভোট চুরির সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে মনোযোগী হতে বলেন।

চ্যানেল আইয়ের জাহিদ নেওয়াজ খান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

মাইটিভির মাহবুব সৈকত কালো টাকার মালিক ও ব্যাংক লুটেরাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

সাংবাদিকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে এবং নির্বাচন ভালো না হলে কমিশন হেরে যাবে। সামগ্রিকভাবে, সংলাপে উঠে আসা দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সহায়ক হবে বলে আশা করেন সাংবাদিকরা।

কালের আলো/এসএকে