পিআর সিস্টেম দেশের গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হবে : হাফিজ
প্রকাশিতঃ 4:15 pm | September 29, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চালুর চেষ্টা দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাফিজ বলেন, যারা বলছে যে, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরা তাদেরকে বলতে চাই, বিএনপি কোনো দুর্বল দল নয়। কারা নির্বাচন হতে দেবে না, আমরা রাজপথে দেখতে চাই। সতেরো বছরের আত্মত্যাগ তো ব্যর্থ হতে পারে না। আজকে আমরা বাংলাদেশের সবাইকে—সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আওয়ামী লীগকে—সবাইকে এই বার্তা দিতে চাই, জিয়াউর রহমান আজ নেই, কিন্তু তার দল বিএনপি এখনো বেঁচে আছে।
প্রশাসনের বসে থাকা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের অপসারণ দাবি করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ যে এখনো নির্বাচনী ম্যাপের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না তার একটি কারণ হলো বর্তমান প্রশাসন… এখানে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বসে আছে। এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং এরা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, আজকে আবারো জানিয়ে জানাবো, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। আমরা স্বৈরাচারের দোসরদেরকে মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না, এদেশের জনগণের এটা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাদেরকে বলব, আপনারা জনগণের কাছে যান। আপনাদের ম্যানিফেস্টোতে বলেন, ইশতেহারে বলেন, যে আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাই এই দেশে… জনগণ যদি আপনাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়, তাহলে আপনারা এই ব্যবস্থা চালু করেন। আমরা মাথা পেতে নেব। কিন্তু এইভাবে জনগণের ওপরে দুই-তিনটি রাজনৈতিক দল, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই ধরনের সিস্টেম করতে যাওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, আমরা কখনোই এটিকে সহ্য করব না। এইভাবে জনগণের ওপর অত্যাচার করে, নিজেদের স্বার্থে, নিজস্ব দলীয় স্বার্থে অদ্ভুত নির্বাচনী ব্যবস্থা—যার সঙ্গে আমাদের দেশের জনগণ পরিচিত নয়—এই ব্যবস্থা আমরা চালু হতে দিতে পারি না।
হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে আমরা সম্মান করি, তিনি দেশের গৌরব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সফলতার মুখ দেখাতে পারেননি। সফলতা পান বা না পান, ব্যয় সংকোচন তো করতে হবে। ১০৪ জনকে নিয়ে কেন জাতিসংঘে গেলেন? ১০ মিনিটের একটা ভাষণ দেবেন… আমি জাতিসংঘে দু’বার গিয়েছি এই ধরনের মিটিংয়ে… আমিও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। এই ধরনের অধিবেশনে ১০৪ জনের বিরাট লটবহর নিয়ে গিয়েছেন… এটা বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সপেয়ারের অর্থের অপচয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস টিমের পাঁচজন গিয়েছেন, অন্যান্য সাংবাদিকরা তো গিয়েছেন… এটা তো আপনার-আমাদের অর্থের অপচয়। গতবছর তো তিনি ৫৪ জন নিয়ে গিয়েছিলেন, এটা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু ১০৪ জনকে নিয়ে এইভাবে পিকনিক করতে যাওয়া বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশের পক্ষে মানানসই নয়। দেশে আজকে গণতন্ত্র নেই বলেই এরকম হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এর চাইতেও বেশি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাতিসংঘে বেড়াতে গিয়েছেন, কখনো দিনের পর দিন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্রাফট… কখনো ফিনল্যান্ডে, কখনো ইংল্যান্ডে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসে আছে। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ—তারা এত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, তারাও নরমাল এয়ারলাইন্সে ট্র্যাভেল করেন। কিন্তু এইভাবে দরিদ্র একটা দেশে মানুষ বিমান নিয়ে ওখানে বসিয়ে রাখে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেক টাকা ফি দিতে হয় বিভিন্ন এয়ারপোর্টে। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত উদারচেতা, সরকার কী করে এটা জানতেও পারে না।
কালের আলো/এসএকে