প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ছে
প্রকাশিতঃ 10:13 am | August 09, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের সব প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বেতন-ভাতা বাড়ছে। শিক্ষকদের বেতনস্তর দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে বিভাগীয় উপ-পরিচালক পর্যন্ত সব কর্মকর্তার বেতন এক গ্রেড করে উন্নীত করতে আগামী সপ্তাহে সুপারিশ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। এ নিয়ে নতুন করে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে সহকারী শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের (এইউইও) মধ্যে। কারণ, বর্তমানে এইউইওদের বেতন স্কেলও ১০ম গ্রেডে। তদারকি কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের একই গ্রেডে অবস্থান প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করছে।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকরা রয়েছেন ১৩তম গ্রেডে। বেতন কাঠামোয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে তিন ধাপ পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এ ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ইনক্রিমেন্টসহ প্রায় ১৫ হাজার। এ ব্যবধানকে ‘বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন সহকারী শিক্ষকরা। এ অসন্তোষ দূর করতে সরকার বেতন গ্রেড উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এতে সায় দিয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদনাম পরিবর্তন করে ‘শিক্ষক’ করা হয়েছে। তাদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের (ডিডি) বেতন স্কেল এক ধাপ উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার পর অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে বসে বেতন বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরা হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সায় দিয়েছে। নতুন পে-কমিশনের কাছে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হচ্ছে।
জানা যায়, সরকারের কাছে দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবে শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডের (১১ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ১১তম গ্রেড (১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) করার কথা বলা হয়েছে। সারাদেশে ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি।
সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ইউএপিইও) ১০ম গ্রেডের (১৬ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে নবম গ্রেড (২২ হাজার টাকা স্কেল) দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সারাদেশে এই পদের সংখ্যা দুই হাজার ৬০৭টি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ইউপিইও) দেওয়া হবে নবম গ্রেডের (২২ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে অষ্টম গ্রেড (২৩ হাজার টাকা স্কেল)। এ পদে সারাদেশে কর্মরত ৫১৬ জন কর্মকর্তা। দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) আছেন ৬৮ জন। তাদের বেতন সপ্তম গ্রেডের (২৯ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ষষ্ঠ গ্রেড (৩৫ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) দিতে সুপারিশ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড পাওয়ায় আমরা খুশি। এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে সময় এসেছে বৈষম্য নিরসনের। এ জন্য সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে হবে। তিনি আরও জানান, ১১তম গ্রেড, উচ্চতর গ্রেড সমস্যা এবং শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহকারী শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দেন তিনি।
কালের আলো/এইচএন/এমএএইচ