কোরবানির চামড়ার হক থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয় : প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 8:40 pm | June 06, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
কোরবানির পশুর চামড়া থেকে অর্জিত আয়ে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং দেশের লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উপকৃত হন— এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া থেকে অর্জিত আয়ে আমার-আপনার দরিদ্র আত্মীয়পরিজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও দেশের লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উপকৃত হয়। আমাদের গরিব স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের হক যেন ঠিক বুঝে পায় সেদিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তবেই এই উৎসবটি হয়ে উঠবে ধনী-গরিব সবার উৎসব। পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে, একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। কোরবানির চামড়া সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা, অভিযোগ ও পরামর্শ হটলাইনের নম্বরে ফোন করে নেওয়া যাবে। আমরা এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি।
প্রধান উপদেষ্টা জনগণকে ঈদের সময় পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পরিচ্ছন্নতা ঈদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সবাইকে আহ্বান জানাই, সকলে মিলে পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।
তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরাই এই দেশ বদলে দিতে পারো। সামান্য সচেতনতা ও অংশগ্রহণ দিয়েই আমরা একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
ভাষণে এ বছর যারা পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবাণীতে আপনাদের দোয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট সবার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের ফলে এ বছর আমাদের হজ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য এসেছে। প্রথমবারের মতো সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘লাব্বায়েক’ অ্যাপের মাধ্যমে হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়মের খবর আসেনি। টাকা দিয়েও হজে যেতে না পারার যন্ত্রণায় কাউকে কাঁদতে হয়নি। হজক্যাম্প কিংবা বিমানবন্দরে কোনো হাজিকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে হয়নি। প্রথমবারের মতো সরকারি টাকায় কাউকে হজে পাঠানো হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ঈদুল ফিতরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা তৎপর হয়েছি। এবার কোরবানির ঈদেও কোনো জিনিসের দাম যাতে আকস্মিকভাবে বেড়ে না যায়, সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ নজর দিয়েছি। ফলে এবার আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চিনি, শাকসবজি-তরিতরকারি ও মসলাসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। আমরা সার্বিক বাজার ব্যবস্থাকে দুর্বৃত্তদের চক্র থেকে বের করে এনে বাজারে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। জনগণকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিতে সরকারের সবরকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঈদের সময় নয়, আগামী দিনে কখনোই বাস, রেল ও বিমানযাত্রায় কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সেজন্য সরকার একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন টিকেটিং প্ল্যাটফর্ম করতে যাচ্ছে, যেখানে একই প্ল্যাটফর্ম থেকেই যাত্রীরা খুব সহজেই বাস, ট্রেন ও ফ্লাইটের টিকেট ক্রয় করতে পারবেন। একইরকমভাবে সব ধরনের সরকারি সেবা যাতে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়, সেজন্য ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ এই নামে একটি সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। দেশের সর্বত্র— শহরে, হাট-বাজারে তরুণ-তরুণীদের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। এটি ঢাকা শহরে কয়েকটি সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
এক জায়গা থেকে যেন সব সেবা দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো সেবা এর আওতায় আনা যায়, সবগুলোকে নিয়ে আসা। আমরা চেষ্টা করছি যাতে শিশু জন্মগ্রহণ করা মাত্রই তার জন্মসনদ পেয়ে যায়। ওটাই হবে তার নাগরিক স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্র কর্তৃক তার দায়িত্ব গ্রহণের অঙ্গীকার। ওখান থেকেই যাবতীয় সব সনদ সে তার নাগরিক অধিকার হিসেবে ক্রমাগতভাবে সম্মানের সঙ্গে পেতে থাকবে। এক অফিস থেকে আরেক অফিসে তাকে দৌঁড়াতে হবে না। দালালের পেছনে মাসের পর মাস ঘুরতে হবে না। বিদেশ সফরে গেলে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায়ই আমাদেরকে সরকারি সেবা পেতে নানারকম দুর্ভোগের কথা জানান। প্রবাসীদের জন্যও বিদেশে তাদের নিজ নিজ শহরে আমরা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছি। সেখান থেকেই তারা পাসপোর্ট নবায়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারবেন।
কালের আলো/এসএকে