৪১ বছর আগের আবেগময় স্বর্ণালী স্মৃতিতে বিমান বাহিনী প্রধান, দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে আপস না করার বার্তা

প্রকাশিতঃ 9:35 pm | May 28, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

‘সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি’-রবিঠাকুরের এই গানটিই সম্ভবত তাঁর কন্ঠে গুঞ্জরিত হচ্ছিল। আবেগ আর অকৃত্রিম ভালোবাসার পানসিতে চড়ে ফিরলেন ৪১ বছর আগের স্মৃতিতে। সুখমাখা সেই স্বর্ণালী স্মৃতি আজও যেন জ্বলজ্বল তাঁর ভুবনে। সময়ের অবিশ্রান্ত ধারায়, যাপিত জীবনের ব্যস্ততার ঘূর্ণিপাকের ভেতরেও নিজের বক্তব্যে গভীর সেই অনুভবকেই মোটা দাগে তুলে আনলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। অবারিত আনন্দের ফল্গুধারায় উচ্ছ্বসিত কন্ঠেই উচ্চারণ করলেন- ‘আজ থেকে ৪১ বছর পূর্বে এই একাডেমির একজন গর্বিত ক্যাডেট ‘চির উন্নত মমশির’ এর সামনে এই প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আমি স্মৃতিকাতর।’ বুধবার (২৮ মে) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) এর ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের প্রারম্ভিক অনন্য মুহুর্তের কথা বলতে গিয়ে এমনই বর্ণিল এক মায়াজালেই নিজেকে যেন আচ্ছন্ন করলেন তিনি।

স্মৃতির পথ ধরেই খানিক সময়ের জন্য নিজেকে সমর্পণ করলেন হারানো সেই সময়ের সীমারেখায়। বাস্তবতার স্পর্শে অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেকালকে বেঁধে দিলেন একালের সঙ্গে; এক অসাধারণ মায়ার মিতালীতে। পেশাদারিত্বের গভীর নির্যাসে দূরদৃষ্টির পরিচয়বহ, দিকনির্দেশনামূলক এবং সুমিত ভাষায় জ্ঞানোদ্দীপক এক দীর্ঘ বক্তব্যই উপস্থাপন করলেন বিমান বাহিনী প্রধান। অন্তরমথিত ভালোবাসায় সেই বক্তব্যে কালের বিবর্তনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শক্তিশালী ও সক্ষম সশস্ত্র বাহিনী, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা-বাদ যায়নি কোন কিছুই। জানিয়ে দিলেন দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে কোন আপস না করার কথা। বললেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন রকম আপস করা হবে না।’

প্রাণোচ্ছল উপস্থিতিতে মেধাবী ক্যাডেটদের চোখের তারায় তখন খেলা করছে দেশমাতৃকার সেবার অমিত সম্ভাবনার স্বপ্ন। বাদ্যের তালে তালে আর পায়ের ছন্দে চট্টগ্রামের বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ড তখন মুখর। দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর প্রশিক্ষণের পর ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে কমিশন লাভ করা ১৫৫ জন নবীন সেনা কর্মকর্তাদের সেই স্বপ্নকে যেন আরও স্বার্থক ও মহিমান্বিত করলেন বিমান বাহিনী প্রধান। উপদেশ দিলেন সামরিক চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে এবং যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার।

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে সর্বদা প্রস্তুত রাখার। তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন বর্তমান ও ভবিষ্যতের যুদ্ধের ময়দানে এককভাবে সফলতা বয়ে আনা সম্ভব নয়। দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে এবং ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ডের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে সাহসী ও বলিষ্ঠ পথচলায়।

  • নবীন নেতৃত্বকে অভিনন্দন ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা
  • বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক
  • সেনাবাহিনী দেশের জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে সরকারকে সহায়তা করতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
  • ভবিষ্যতে বিএমএ’র নাম বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপ্তি লাভ করবে
  • ‘ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ড’ হবে ডায়নামিক

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিমান বাহিনী প্রধান প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাইনুর রহমান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল খন্দকার মোহাম্মদ শাহিদুল এমরান তাকে স্বাগত জানান।

আইএসপিআর আরও জানায়, এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সর্বমোট ১৫৫ জন অফিসার ক্যাডেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন ১২৮ জন পুরুষ ও ২৩ জন মহিলা অফিসার। এছাড়াও কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে আছেন ৪ জন ফিলিস্তিনি অফিসার। তাঁরা নিজ দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদান করবেন। ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসেবে অসামান্য গৌরবমন্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ অর্জন করেন ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সম্রাট জাবির। সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কোম্পানি সিনিয়র অফিসার মো. আব্দুল ওয়াদুদ মাসুম ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। বিদেশি ক্যাডেটদের মধ্যে ফিলিস্তিন এর অফিসার ক্যাডেট সার্জেন্ট মোহাম্মদ ইসবে ‘বিএমএ ট্রফি অফ এক্সিলেন্স’ লাভ করেন। পরে প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেটরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন। এরপর অনুষ্ঠানে আগত অতিথি, প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেটদের অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিয়ে দেন।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘বক্তব্যের শুরুতে আমি বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি জাতির সূর্য সন্তান, ৭১’র শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে, যারা দেশ মাতৃকার জন্য অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে গেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও লাল-সবুজের পতাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যেকোন ক্রান্তিলগ্নে প্রজ্ঞা, কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসের সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অটুট রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য সদা তৎপর। আমি স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে একজন গর্বিত সহযোগী।’

ভৌগোলিক অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন রকম আপস করা হবে না
বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি এটি। কিন্তু আমাদের ভৌগোলিক অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন রকম আপস করা হবে না, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উচ্চারণ বিমান বাহিনী প্রধানের। এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হচ্ছে নন ট্র্যাডিশনাল থ্রেটসহ সকল বাহ্যিক ও আন্ত:রাষ্ট্রীয় হুমকি থেকে দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। তাঁরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একের পর এক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে আজ দেশের একটি বিশ্বস্ত সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী প্রকৃত পক্ষে দেশের জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে সরকার এবং তাঁর অসামরিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও বিশ্বের শান্তিরক্ষা, মানবিক সহায়তা কর্মসূচি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালনেও সদা প্রস্তুত।’

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার আহ্বান পূরণসহ একবিংশ শতাব্দীর সকল ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা একটি আধুনিক, সুশিক্ষিত ও দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইনডিজিনাস ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন নিজেদের সক্ষমতা বাড়বে তেমনি আমাদের পরনির্ভরশীলতাও হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’

ভবিষ্যতে বিএমএ’র নাম বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপ্তি লাভ করবে
দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা একটি পেশাদার বাহিনীর প্রাণস্বরূপ উল্লেখ করে বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে সূচনা করে তাঁর সামরিক জীবন। এখান থেকেই তৈরি হয় সামরিক বাহিনীর একেকজন দক্ষ কর্মকর্তা। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি এই প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর কবিতা বিদ্রোহীর যুগশ্রেষ্ঠ বাণী ‘চির উন্নত মমশির’ কে হৃদয়ে ধারন করে সামরিক নেতৃত্ব তৈরির নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একাডেমি থেকে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের নেতৃত্বে শৃঙ্খলা, আনুগত্য, ন্যায়পরায়ণতা ও কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশের অফিসার ক্যাডেটগণও এই একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। ভবিষ্যতে এই একাডেমির নাম বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপ্তি লাভ করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

নবীন নেতৃত্বকে অভিনন্দন ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা
নবীন অফিসার ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। আজ হতে তোমাদের ওপর অর্পিত হচ্ছে দেশ মাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। কারণ বিএমএতে দীর্ঘ তিন বছর কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে আজ তোমরা সেনাবাহিনীতে কাক্সিক্ষত কমিশন লাভ করতে যাচ্ছো। এজন্য তোমাদেরকে সকলকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন।’ বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘আজ থেকে ৪১ বছর পূর্বে এই একাডেমির একজন গর্বিত ক্যাডেট ‘চির উন্নত মমশির’ এর সামনে এই প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আমি স্মৃতিকাতর এবং একই সঙ্গে নবীন নেতৃত্বের প্রতি কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া আমার কর্তব্য বলে মনে করছি। নেতৃত্বের সর্বোচ্চ গুণাবলী যেমন সততা, সত্যবাদিতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম দ্বারা সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব তোমরা আন্তরিকভাবে পালন করবে এটিই তোমাদের কাছে আমার প্রত্যাশা।

এই একাডেমি থেকে যে প্রশিক্ষণ তোমরা গ্রহণ করছো তাঁর যথাযথ অনুশীলন ও প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনে তোমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। তোমাদেরকে যেকোন ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। সামরিক চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে এবং যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সব সময় সর্বাগ্রে এরপর প্রতিষ্ঠান ও অধীনস্থদের সম্মান, কল্যাণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং সবশেষে আসবে তোমার নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য। সামরিক বাহিনীতে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধের প্রগাঢ় মিশ্রণে সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে সফল হতে হবে’-যোগ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।

‘ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ড’ হবে ডায়নামিক
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন বিমান বাহিনী প্রধান। নবীন সামরিক কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, ‘তোমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে যোগ্য হতে হবে। উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় মনোবল এবং উন্নত পেশাদারিত্বের মাধ্যমে প্রতিটি কাজেই উদ্যোগী মনোভাব ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। মনে রাখবে, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যুদ্ধের ময়দানে এককভাবে সফলতা বয়ে আনতে পারবে না। ‘ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ড’ হবে ডায়নামিক সেখানে সাফল্য নির্ভর করবে যৌথ প্রশিক্ষণ, সশস্ত্র বাহিনীর হলিস্টিক উন্নয়ন ও রিসোর্সের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে। তিন বাহিনীর মধ্যে জয়েন্টনেস হচ্ছে যুদ্ধের সাফল্যের অন্যতম প্রয়োজনীয়তা বা নেসেসিটি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে এবং ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ডের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে তোমাদের কর্ম ও পথচলা হবে সাহসী ও বলিষ্ঠ। মনে রাখবে, সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে দেশ প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ কর্ণধার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই হবে তোমাদের জীবনে সর্বোচ্চ সফলতা।’

সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শৃঙ্খলা প্রধান চালিকাশক্তি, মন্তব্য করে এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, ‘এখানে সকল বিষয় নির্ধারিত নিয়ম, প্রথা ও অনুশাসন দ্বারা পরিচালিত হয়। বিএমএতে তোমাদেরকে নৈতিক শিক্ষাসহ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়াস ছিল। কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নিজের বিবেকের দ্বারস্থ হবে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির উন্নত ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রে তোমাদেরকে সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারবে। তোমরা ভুলে যাবে না, তোমাদেরকে গড়ে তুলতে দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের অবদান রয়েছে। তুমি এখন দেশের সম্পদ। তোমার কোন ক্ষয় বা অপচয় দেশের জন্য ক্ষতি। সেকারণে কোন ভুল সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়ে নিজের তথা দেশের ক্ষতি হতে বিরত থাকতে হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে