অর্থনীতি বেশ চাপে

প্রকাশিতঃ 5:33 pm | May 28, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বেশ চাপে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। মন্দায় রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। অস্তিত্ব সংকটে শিল্প-কারখানা। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা, ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে চরম চাপে রয়েছে ব্যবসা। পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা মোকাবিলায় সমন্বিত নীতি গ্রহণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেই আশঙ্কা তাদের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। একবছর আগে অর্থাৎ, ২০২৩ সালে ছিল সাড়ে ২৫ লাখ। এ হিসাবে এক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে দেড় লাখ।

বিনিয়োগ খরার মধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থা চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের ঘরে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে- প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে- প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ হতে পারে। দাতা সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে বাস্তবে তাই হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীবিদরাও।

অন্যদিকে, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পাশাপাশি আরো ৪৪ হাজার কোটি টাকা নতুন করে খেলাপি হওয়ার পথে। ব্যাংকিং খাতেও চলছে তারল্য সংকট। সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। সরকারের ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা এই চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার। যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এতে আর্থিক খাতে চাপ তৈরি হয়েছে- যা বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে।

বর্তমানে দেশের শিল্প খাত চরম চাপের মুখে রয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে, আবার কিছু কারখানা আংশিক বন্ধ কোনোটা বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব সরাসরি ঋণগ্রহীতাদের ওপর পড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। এই দুটি মিলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চলমান এই অস্থিরতায় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা।

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে অর্থনীতি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, তারপরও এখনো ৯ শতাংশের ওপরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ চাপে রয়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক মাস আগে অর্থাৎ, মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, একদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। এই দুটি মিলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চলমান এই অস্থিরতায় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ‘অর্থনীতির সমগ্র মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে স্থিতিশীলতা অর্জনের ওপরে। এটা কিন্তু একপেশে হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, দারিদ্র্য হ্রাস, বেকারত্ব হ্রাস এগুলো যথাযথ মাত্রায় মনোযোগ পাচ্ছে না। এটার জন্য যেটা হবে অনিবার্যভাবে দারিদ্র্য বাড়বে, বেকারত্ব বাড়বে, প্রবৃদ্ধি কমবে। সুতরাং, দাতা সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।’

কালের আলো/এমএএইচএন