প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রথম যৌথ কমিটির সভায় চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ রূপরেখা, ঢাকা-রিয়াদ দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

প্রকাশিতঃ 10:58 pm | May 08, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

দীর্ঘমেয়াদি ও শর্তহীন বন্ধুত্ব রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের। মুসলিম ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ দেশ দু’টির মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে ক্রমশ। বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে মনোযোগী ঢাকা-রিয়াদ। ভবিষ্যতে সামরিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করতে এবার প্রথমবারের মতো প্র্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রথম যৌথ কমিটির সভা করেছে তাঁরা। ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিন দিনব্যাপী এই সভার মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন দু’দেশের দু’প্রতিনিধি দলের শীর্ষ নেতা।

মঙ্গলবার (০৬ মে) থেকে শুরু হওয়া এই সভাটি শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (০৮ মে)। সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের দলনেতা ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিপরীতে সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল হামেদ রাফে আল-আমরি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ১৪ জন সামরিক-বেসামরিক সদস্য। বাংলাদেশ-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক যৌথ কমিটির দ্বিতীয় সভা আগামী বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অনুষ্ঠানেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশ দু’টির পক্ষ থেকেই এই সভাকে ঐতিহাসিক ও মাইলফলক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, কৌশলগত সহযোগিতা সম্প্রসারণ, যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা শিল্প ও অনুশীলনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে কার্যকর সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যেই প্র্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রথম যৌথ কমিটির সভা উভয় দেশের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া, বিশ^াস ও আস্থা বাড়িয়েছে। ফলে দেশ দু’টির দ্বিপাক্ষিক সামরিক সম্পর্ক জোরদার ও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এই সভাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত বৈঠকে
তিনদিনব্যাপী যৌথ সভায় বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। কার্যরক এই বৈঠকে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিনিধি দল ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার চেতনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাবে দু’দেশ।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতা মেজর জেনারেল হামেদ রাফে আল-আমরি তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশের জনগণকে উষ্ণ আতিথিয়তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি মুসলিম ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ ও সৌদি আরব ভবিষ্যতেও সামরিকসহ সকল ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে। উভয় দেশের মধ্যকার সামরিক সহযোগিতার এই ধারা অব্যাহত থাকবে ভবিষ্যতেও।

দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক
প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। তবে কখনও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত কোন সভা হয়নি দেশ দু’টির মধ্যে। এবারই প্রথম এই সংক্রান্ত সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। সভার সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের দলনেতা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান এই বৈঠককে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সৌদি প্রতিনিধি দলের প্রধান মেজর জেনারেল হামেদ রাফে আল-আমরিসহ উভয় দেশের প্রতিনিধিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাদের সম্মতি ও সহযোগিতায় এই যৌথ বৈঠক সম্ভব হয়েছে। তাঁর বক্তৃতায় তিনি উভয় দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির অঙ্গীকার তুলে ধরেন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান নিজের বক্তব্যে দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক হিসেবে সৌদি আরবের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রক্রিয়ায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সৌদি আরবের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা ও সম্মানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। উভয় দেশের জনগণের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা এবং ভবিষ্যতে সৌদি প্রতিনিধি দলকে পুনরায় বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

কালের আলো/এমএএএমকে