তৃণমূল থেকেই আ.লীগকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা শেখ হাসিনার

প্রকাশিতঃ 6:39 pm | April 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

তৃণমূল থেকেই আওয়ামী লীগক নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ একসঙ্গে বসেছি। সেইসঙ্গে আমরা আরও একটি কাজ করতে চাই, ইতোমধ্যে আমাদের প্রেসিডিয়াম মিটিং করেছি, ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করেছি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম কার্যকরী সদস্যের নিয়ে আটটি বিভাগে কমিটি গঠন করেছি।

‘যে কমিটির দায়িত্ব থাকবে আমাদের সংগঠনগুলি একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন করে ঢেলে সাজানো; কোথায় কমিটি আছে না আছে সেগুলো দেখা; সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণত রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গেলে অনেক সময় সরকার ধীরে ধীরে জনমানুষ থেকে হারিয়ে যায়, জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছে, জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এবার যে নির্বাচনটা হয়ে গেল সেদিকে তাকালে দেখা যাবে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যেটা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ব্যবসায়িক সম্প্রদায়; কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সব পেশাজীবী মানুষ এবং নবীন ও নারী ভোটাররা আওয়ামী লীগ সরকারকে আবারো চেয়েছে তাদের সেবা করার জন্য। তারা সেজন্য ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৬৯২/৬৯৪টির মত নমিনেশন দিয়েছে। নির্বাচনকে তারা মনে করেছে একটা ব্যবসা। সিট বেচে তারা কিছু পয়সা কামাই করে নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের প্রতি তাদের খুব একটা নজর ছিল না। এর একটা কারণ, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে যখন সার্ভে করা হয়েছিল, সেই সার্ভেতে তখন থেকে স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগকে জনগণ চায়। তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। তাই তারা নির্বাচন করার থেকে সিট বিক্রি করে বাণিজ্য করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যার জন্য তাদের এই হাল।’

বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এগুলোই ছিল তাদের কাজ। আজকে দেশের মানুষ শান্তি আছে। এবার ব্যাপকভাবে নববর্ষ উদযাপন হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবটা করেছে। আমরা নববর্ষ ভাতাও দিচ্ছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।’

জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন দেশটি জাতির পিতার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে তখনই ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা ঘটে। নির্মমভাবে জাতির পিতাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়।’ ১৫ আগস্ট পববর্তী ২১ বছরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর পর জাতির জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। এ সময় মানুষের কোনও অগ্রগতি হয়নি। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে টানা তিনবার মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতা আসে আওয়ামী লীগ, এর পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে ফের বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করি এবং এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজকে ক্ষুধামুক্ত, বাংলাদেশ আজকে দারিদ্র্য মুক্ত হবার পথে। আমরা প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে দারিদ্র্যের হার নামিয়ে এনেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আজকে গ্রামের মানুষ দারিদ্র্য মুক্ত হচ্ছে, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে। এটাই জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ।’

মুজিব বর্ষ পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো। এজন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। সরকারিভাবে কমিটি গঠন করেছি। দলের পক্ষ থেকেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। একটি কমিটিও করেছি। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপন করবো। সেই উপলক্ষ্যে আমরা উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যযকরী পরিষদ একসঙ্গে বসেছি।’

কালের আলো/এআর/এমএইচএ