ঐক্যের দৃঢ় বন্ধনে আরও সুসংহত সশস্ত্র বাহিনী

প্রকাশিতঃ 10:51 am | April 25, 2025

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য নতুন এক সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন এক মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জমিনে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দৃশ্যমান অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। যদিও নানা বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। অভ্যুত্থানের অংশীদারদের মধ্যে বিভক্তিও স্পষ্ট। গত ৮ মাসে নানা ওলটপালটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। জাতির স্বার্থে, মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। জুলাই আন্দোলনের মতো সবাই এক থাকলে দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটগুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব।

ডিসেম্বর থেকে জুন টাইমলাইন ধরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে অন্য উপদেষ্টাদের মুখেও এমনই কথা উঠে আসছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঐক্য, সংহতি, গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের পক্ষে একাধিকবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন দেশের সঙ্কটময় মুহুর্তে ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়ানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিভিন্ন সময়ে তিনি এসব ইস্যুতে কথা বলেছেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশবাসী ও বিশ্ববিবেক জাতির দুর্দিনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। গত মাসে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি যেভাবে সেনাবাহিনী সামলেছে, সে বিষয়েও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সেনাবাহিনীর বহুমাত্রিক পদক্ষেপে এক সময়কার নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এখন বেশ স্বাভাবিক। নিজেদের উচ্চকিত মানবিক মূল্যবোধে সহানুভূতিশীলতাপূর্ণ সামাজিক সম্প্রীতি গড়তে সহমর্মিতার মাধ্যমে দায়িত্ব-কর্তব্যের মেলবন্ধনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় নিজেরাও ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থেকেছে। অসীম ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে একদিন-প্রতিদিন। দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবেই। শান্তি ও সম্প্রীতির সম্মিলনে দৃঢ়, সাহসী ও কুশলী নেতৃত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে জনজীবনে শান্তি-স্বস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে অগ্রগতির মিছিলে দেশকে শামিল করতেও সক্ষম হয়েছেন সেনাপ্রধান।

দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। গত দুই মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত দুই হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে এই পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক, ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী সততা, ন্যায়-নীতির সঙ্গে, প্রত্যয় ও সহনশীলতার সঙ্গে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও করবে।

সমুদ্র উপকূলীয় দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছে ‘সুনীলের অতন্দ্র প্রহরী’ বাংলাদেশ নৌবাহিনী। নিয়মিতই অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ এই প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন অবিচল নিষ্ঠা-আন্তরিকতায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একাত্ম করেছেন নিজেদের।

পতিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়লেও স্বমিহমায় টিকে রয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী নিজেদের সম্মিলিত প্রয়াসে গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সফলে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। আত্মীয়তাকে প্রাধান্য না দিয়ে ‘সবার ওপরে দেশ’ এই নীতি প্রতিপালনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে স্বার্থক উপসংহারে পৌঁছে দিতে আদিগন্ত সূর্যের মতোই সত্যের কাঠিন্যে হয়েছিলেন অত্যুজ্জ্বল। যার বহি:প্রকাশ শুভ্র, সুন্দর, প্রীতি-উজ্জ্বল নতুন জীবনের জয়ধ্বনি। আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে সব রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গভীর দৃষ্টি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশকে শান্ত ও স্বাভাবিক রাখতে সরকারের নির্দেশেই তিনি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হিমালয়সম বাধা ডিঙিয়ে দেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখতে সঠিকভাবে প্রতিটি বিষয় সমন্বয়, তদারক ও নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন।

নিজেদের কর্মগুণের মধ্যে দিয়েই বারবার প্রমাণ করেছেন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেও বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করছে, সেটি দেশ ও জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।’ কঠিন সব বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে জনগণের ভালোবাসা ও একাত্মতায় অনির্বাণ বাংলায় তিনি গেঁথেছেন সেই মর্মস্পর্শী সুর-‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’। দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে ঐক্য, মৈত্রী, সামাজিক সংহতি ও শান্তি-সম্প্রীতির দীপ্তিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পরতে পরতে। নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের নিশ্বাস-প্রশ্বাস, বুদ্ধি-বোধে-মর্মে-কর্মে আর হৃদয়ানুভূতিতে উচ্চারিত মূলমন্ত্রই ‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’।

দিন কয়েক আগে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে ‘সম্প্রীতি ভবনের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘আমরা শান্তির দেশ চাই, শৃঙ্খলার দেশ চাই। আমরা এখানে হানাহানি, বিদ্বেষ চাই না।’ তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন মত থাকতে পারে। অবশেষে আমরা সবাই সবাইকে যেন শ্রদ্ধা করি। একে অপরের বক্তব্য, মতামতকে যেন শ্রদ্ধা করি। আমাদের নিজস্ব মতামত থাকবে, সেই অনুযায়ী আমরা অবশ্যই কাজ করব। কিন্তু আমাদের একে অপরের প্রতি যাতে শ্রদ্ধাবোধ থাকে, সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখা জরুরি।’

বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও মানচিত্র অক্ষুণ্ন রাখতে অপরিহার্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় ও আলোকোজ্জ্বল ইতিহাস বহমান নদীর মতো। আমাদের সাহস আর অস্তিত্বের উৎসও সশস্ত্র বাহিনী। দেশের প্রতিটি দুর্যোগে-সঙ্কটে সশস্ত্র বাহিনী কখনও পথ হারায়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য রয়েছে। দেশের এই সঙ্কটময় মুহুর্তে সশস্ত্র বাহিনীর নিজেদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করছেন। সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। কারও বাকস্বাধীনতার ওপরও হস্তক্ষেপ করেনি।

কিন্তু বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ও দেশের বাইরে থেকে কুৎসিত, হিংস্র, ভয়ঙ্কর, সর্বৈব ও আগ্রাসী মিথ্যাচার চলছে। অপতথ্যের তাণ্ডব চালাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী আগ্রাসন মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সব অপপ্রচার রুখে দিতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব-অখণ্ডতা রক্ষায় প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে হবে। কোনভাবেই তাদের প্রতিপক্ষ ভাবা যাবে না, প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া যাবে না। কোন রকম চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।

গত মাসে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নানা ধরনের অপপ্রচার, গুজব, উসকানিমূলক বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন। ঢাকার বাইরের সেনা কর্মকর্তারা অনলাইন মাধ্যমে ওই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কর্মকর্তা ও সৈনিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগ দেশ সব সময় স্মরণ করবে। তিনি সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়ে সতর্ক করেন। সেনাপ্রধান বলেন, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে উসকানিদাতাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়। এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার বাহিনী। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকার জানে, জনগণও জানে। অনেকে নানা ভুল তথ্য, অপতথ্য নানাভাবে ছড়াচ্ছে, এতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি সামলাতে হবে ধৈর্যের সঙ্গে। সেনাবাহিনীর কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশ ও দেশের জনগণ।’

স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে জড়িয়ে চটুল গল্পে নিষ্কলুষ জীবনে কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা থামেনি এখনও। কথা বলার জিহ্বাকে সম্বরণ করতে পারছে না অনেকেই। একবার ভেবে দেখুন-দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে জনআস্থায় চিড় ধরালে আখেরে ক্ষতি হবে দেশের ও দেশের মানুষের। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে এই সশস্ত্র বাহিনীই জনগণের বুকে গুলি চালাতে অপারগতা প্রকাশের পরই অভ্যুত্থান স্বার্থক ও কাক্সিক্ষত সাফল্যের বন্দরে নোঙর করেছে। এখন সশস্ত্রবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে।

দেশের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের গৌরবের স্মারক সশস্ত্র বাহিনী সততা, পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও প্রশ্নাতীত আন্তরিকতার সঙ্গে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন নজির স্থাপন করেছে। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরদারের ক্ষেত্রে রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশবিরোধী যেকোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে প্রতিহত করতে এককাট্টা। সঙ্কটকালের কাণ্ডারিদের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। অনাকাক্সিক্ষত, অযৌক্তিক ও অনভিপ্রেত বিতর্কের মাধ্যমে তাদের মনোবল নষ্ট করা যাবে না। বর্তমানে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর চেইন অব কমাণ্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। বৈশ্বিক পরিসরেও তাঁরা মানবিক বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর।

কোন অপপ্রচার তাদের অটল মনোবলকে দুর্বল করতে পারবে না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, অটুট ও অবিচল রয়েছেন। এজন্য তাদের বিষয়ে কথা বলার সময় আমাদের আবেগের বশবর্তী না হয়ে বিবেককে প্রাধান্য দিতে হবে। আবেগতাড়িত মানুষ অহংকারি, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিণামদর্শী হয়ে ওঠে। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর ইমেজ, মেধা, পরিশ্রম ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াসকে প্রতিহত করতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককেই নিতে হবে। চরম সঙ্কটময় এই সময়ে এটিই আমাদের প্রত্যেকের সর্বোত্তম লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আসুন, আমরা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় সামাজিক সংহতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নিশ্চিত করি। শান্তিকামী দেশবাসীরও প্রত্যাশা আর কোন হানাহানি বা বিদ্বেষ নয়। পারস্পরিক গঠনমূলক আলাপ-আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগকে সফল করি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি ও কল্যাণ-সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক থেকে জাতীয় মতৈক্য ও পারস্পরিক সমঝোতার পথ প্রশস্ত করি। সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে অযাচিতভাবে আক্রমণ না করি। দেশের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে অস্তিত্ব ও মর্যাদার এই প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকি।

কালের আলো/এমএএএমকে