কারণে-অকারণে বাজানো হর্নে কান ঝালাপালা
প্রকাশিতঃ 8:10 pm | April 20, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর সামনের মহাসড়ককে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করেছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এরপর শব্দদূষণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই আগের অবস্থা তৈরি হয়েছে। সার্বিকভাবে বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো মাত্রাতিরিক্ত হর্নে কান রীতিমতো ঝালাপালা হয় চলাচলকারীদের। যদিও চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, গত বছরের ১ অক্টোবর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি-৪ অনুযায়ী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা ও তার সামনের সড়কের উত্তর-দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার (স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে হোটেল লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত) এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তখন উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতি। পরে ওই বিমানবন্দর ও মহাসড়কে ‘নীরব এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড বসানো হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ কোন নিয়ম মানছেন না। যে যেভাবে পারছেন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজিয়েই চলছেন। বাস-মোটরসাইকেল হর্ন বাজানোয় এগিয়ে রয়েছে। তবে কত মাত্রায় তারা হর্ন বাজাচ্ছেন তা নির্ণয় করা কিংবা তদারকি করার কাউকেও দেখা যায়নি। হর্ন যে মাত্রাতিরিক্ত শব্দ তৈরি করে বাজানো হচ্ছে সেটা যে কোনো মানুষ উপলব্ধি করবে। যানজটে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও হর্ন বাজাতে দেখা যায়। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া সরকারের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মোটেও।
তবে রাজধানীর সড়কে হর্ন ছাড়া যানবাহন চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন যানবাহন চালকরা। তিনি বলেন, ‘সড়কে পথচারীরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা মানেন না। আবার সড়কের কোথাও জেব্রা ক্রসিং বা ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। ফলে যত্রতত্র সড়ক পার হন পথচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে হর্ন না দিলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।’
শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারিত।
এ আইনে শাস্তি হিসেবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি গবেষণায় দেখা যায়, নীরব এলাকার কোনোটিতেই আইন অনুযায়ী ‘নীরব এলাকা’ বাস্তবায়ন হয়নি। সবগুলোতেই শব্দের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, নীরব এলাকা সচিবালয়ের ১২টি লোকেশনে শব্দের মাত্রা গড়ে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল। জাতীয় সংসদ এলাকায় ৭১ দশমিক ৮৬ ডেসিবেল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় ৭৫ দশমিক ৫৮ ডেসিবেল ও আগারগাঁও এলাকায় ৭২ দশমিক ৮৬ ডেসিবেল।
পরিবেশবাদী সংগঠন পরিজারের এক গবেষণায় দেখা যায়, আগে নীরব এলাকায় দিনে ৮৪ দশমিক ৫ থেকে ১০১ দশমিক ৭ ডেসিবেল এবং রাতে ৯৬ দশমিক ৪ থেকে ১০১ দশমিক ৫ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে দিনে ৮২ থেকে ৯১ ডেসিবেল এবং রাতে ৮৩ থেকে ৯১ দশমিক ৬ ডেসিবেল।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ অক্টোবর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সামনে ‘নীরব এলাকা’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, গাড়িতে হর্ন বাজানো আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। তাই হুট করে হর্ন না বাজানো কঠিন। প্রথম এক সপ্তাহ আমরা এই এলাকায় নীরব এলাকার কর্মসূচি পরিচালনা করবো, কারণ বিদেশ থেকে যখন কেউ এসে নামে তার কানে এই হর্নের শব্দ বাজে। তাই আমরা প্রথমে এই এলাকাকে বেছে নিয়েছি।
কালের আলো/আরআই/এমকে