প্রথম কাজ জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 8:36 pm | September 05, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসে আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করা। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন একতা ও সমন্বয়।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাস উদযাপন করছি। ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র এবং সর্বস্তরের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, তারা (ছাত্র-জনতা) ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে, যার জন্য নৃশংস একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। শেখ হাসিনা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র ও একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশকে এবার পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের।

তিনি বলেন, আজ আমি সেই সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের স্মরণ করছি, যারা জঘন্য হত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। স্মরণ করছি আন্দোলন চলাকালে নিহত সাংবাদিকদের। আজ আমি এই বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

তিনি বলেন, আমি অভিবাদন জানাই হাজার হাজার মানুষকেও, যারা আহত হয়েছেন, প্রাণঘাতী আঘাতের শিকার হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, কিংবা চক্ষু হারিয়েছেন। গত মাসে আমাকে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং সব জানা-অজানা শহীদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই দায়িত্ব নিয়েছি।

আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই। তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিল। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনও নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিপ্লবের সময় তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছো এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চিরবিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছ। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছো এবং সারা দেশে ট্রাফিক পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছো।

আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখনই সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্ম দরকার।

মানবাধিকার নিয়ে তিনি বলেন, মাত্র এক মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এ দেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া আমি জুলাই ও আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরি করার প্রয়াসে শীর্ষ আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ ও স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি।

নিহতদের তালিকা সম্পাদন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূরদূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ করা।

আহত শত শত মানুষ, যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারকে দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির শেষ পর্যায়ে আছে। যাদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, আমরা তাদের কখনোই ভুলবো না।

গুম ও আয়নাঘর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে সই করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আলাদাভাবে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী।

তিনি বলেন, আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা বলপূর্বক গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারবো।

ড. ইউনূস বলেন, গত মাসের শেষের দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া আমার ভাষণে আমাদের সরকার এ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গ্রহণ করেছে, আমরা তার একটা প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতা এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ক্রমাগত বৈঠক করে যাচ্ছি। তারা আমাদের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। আমরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়ে অভিভূত হয়েছি। আমাদের সাহসী এবং দেশপ্রেমিক প্রবাসীরাও জাতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমি তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আজ এই স্মৃতিময় বিষাদ দিনে আমি শহীদদের প্রতিটি পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা। আমি সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবো, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে দেখা করবো। আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা কখনোই শহীদদের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবো না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করা। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন একতা ও সমন্বয়।

নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা নিলাম শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসেবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন তা আমরা কখনও হাতছাড়া হতে দেবো না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারও প্রতিজ্ঞা করলাম, তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বোই।

এখনই সময় পড়াশোনায় ফেরার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের সময়েও নানা ইস্যুতে রাজপথে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, এখনই সময় পড়াশোনায় ফেরার। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপ্লবের সময় তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছ এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চিরবিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছ। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ, সারা দেশে ট্রাফিক পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছ।

শিক্ষার্থীদের তিনি আরও বলেন, আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখনই সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহিদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।

তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনও নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসে আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করা। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন একতা ও সমন্বয়।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ