দেশের আকাশসীমায় যেকোন হুমকি মোকাবিলায় পরিপূর্ণ সক্ষমতায় প্রস্তুত থাকার বার্তা বিমান বাহিনী প্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:09 pm | June 27, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেশের আকাশসীমা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। ৫৩ বছর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কিলো ফ্লাইট গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় বাহিনীটির পথচলা। ইতিহাসের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শীতায় পুরোদমে চলে বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। প্রতিনিয়ত বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিমান, র্যাডার এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতেই নিজেরাই প্রশিক্ষণ বিমান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। জাতির পিতার নামে যার নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বেসিক ট্রেইনার’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসে বিমান বাহিনী এখন আরও বেশি আধুনিক ও শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দেশের আকাশসীমার ওপর আগত যেকোন হুমকি ও আক্রমণ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পরিপূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) যশোরে অবস্থিত বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৪তম বাফা কোর্স ও ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২৪’ কোর্স এর কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (গ্রীষ্মকালীন)-২০২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান। কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালনেও নির্দেশনা দিয়েছেন বিমানবাহিনী প্রধান।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেন। তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যাদের আত্মোৎসর্গের কারণে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে তিনি স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়সম মনোবল সৃষ্টিকারী বিমান অভিযানের উদ্যোক্তা বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ও দুঃসাহসিক আকাশ যুদ্ধ পরিচালনাকারী কিলো ফ্লাইটের সদস্যদেও, যাদের দৃপ্ত প্রত্যয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।
অতীতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও অগ্রসর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তুলে ধরেন নিজেদের অদম্য অগ্রযাত্রার বাস্তবিক চিত্র। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অজস্র সীমাবদ্ধতা ও পাহাড়সম প্রতিকূলতা নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মাত্র তিনটি পুরনো বিমান নিয়ে কিলোফ্লাইট নামে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দু:সাহসিক ৫০টি মিশন সফলভাবে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করে আমাদের কাক্সিক্ষত বিজয়কে করেছিল তরান্বিত। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আকাশ প্রতিরক্ষার পবিত্র দায়িত্ব, সুগভীর দেশপ্রেম এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। ৫৩ বছরের পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ব্যাপ্তি ও পরিসর যেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ব্যাপকতা এসেছে সামগ্রিক কর্মকান্ডে। বর্তমানে বিমান বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের সমন্বয়ে সক্ষমতা ও অবস্থানগত দিক থেকে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও অগ্রসর।’
দেশের মাটিতে নিজেরাই তৈরি করেছে প্রশিক্ষণ বিমান
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতেই নিজেরাই প্রশিক্ষণ বিমান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। জাতির পিতার নামে নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বেসিক ট্রেইনার। জাতির পিতার প্রগাঢ় দেশপ্রেম, সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শীতা বিমান বাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের কাছে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার আদর্শ ও আমাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে চাই। বিমান বাহিনীর মূল দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আকাশসীমার প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এই গুরুদায়িত্ব পালনে বিমান বাহিনী জাতির পিতা কর্তৃক ঘোষিত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ মূলমন্ত্র অনুসরণ করে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দেশের আকাশসীমার ওপর আগত যেকোন হুমকি ও আক্রমণ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পরিপূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সদা সচেষ্ট
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সদা সচেষ্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি একটি সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ সূচির আলোকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সুখ্যাতির ফলে বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহের অফিসার ক্যাডেটরা এই একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে আরও অধিক বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন এবং এই একাডেমির মান বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে। দেশের এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আরও আধুনিক বিমান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের ট্রফি এবং ফ্লাইং ব্যাজ
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের মাঝে ট্রফি এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন। অফিসার ক্যাডেট সাবিত হাসান রাফি ৮৪তম বাফা কোর্স সার্বিক প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য ‘সম্মানসূচক তরবারি’, অফিসার ক্যাডেট মো. ফাহিম উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং অফিসার ক্যাডেট মোঃ মুস্তাকীমুর রহমান জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’ লাভ করেন। এছাড়াও ৮৪তম বাফা কোর্স (গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ) এ সেরা কৃতিত্বের জন্য অফিসার ক্যাডেট মোঃ মুস্তাকীমুর রহমান ‘বিমান বাহিনী প্রধানের ট্রফি’ লাভ করেন। এই গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে বীর উত্তম সুলতান মাহমুদ স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করে।
এ কুচকাওয়াজ এর মাধ্যমে ১৩ জন মহিলা অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৫৯ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। অফিসার ক্যাডেট একাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার এ এস এম মোস্তাকিম বিল্লাহ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন প্রকার বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও আকর্ষনীয় এ্যারোবেটিক ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সামরিক ও অসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের সামরিক অ্যাটাশে ও সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে