স্বাভাবিক পথে সেবা নেই বিআরটিএতে
প্রকাশিতঃ 10:57 am | January 26, 2023

কালের আলো রিপোর্ট :
রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্কেল অফিস। সক্রিয় একাধিক দালালচক্র। এই চক্রের কারণেই কীনা সহযোগিতা মেলে না হেল্প ডেস্কে। দালালহীন কোন কাজই সেখানে ভোগান্তির নামান্তর। ফলত ভোগান্তি বা হয়রানি এড়াতে দালালের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ সেবারপ্রার্থীরা। গোপন সমঝোতা বা দফারফায় মুহুর্তেই যেকোন কাজ করে দিচ্ছে দালালের দল।
দালালদের সহায়তা ছাড়া মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবা পাওয়া দুষ্কর-এই কথার প্রমাণ মেলে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া পেশাদার চালক শরিফুল ইসলামের কথায়। লাইসেন্স নবায়ন করতে তার উপস্থিতি দালাল চক্রের নজরে আসে। তিনি সব বাধা ডিঙিয়ে দিয়েছিলেন হেল্প ডেস্কে। কিন্তু সহযোগিতা না পাওয়ায় যখন হতাশ সেই সময়েই স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন দালালের হাতে। শরিফুল বলেন, ‘একদিনেই কাজ হবে এই প্রতিশ্রুতিতে ৮ হাজার টাকা দিয়েছি একজনকে (দালাল)। অহেতুক ঘুরাঘুরির চেয়ে পকেটের পয়সায় সব কাজ সম্ভব।’
কেবল শরিফুলই নয়, সেবাপ্রার্থীদের সবার জন্য একই কথা যেন প্রযোজ্য। পরীক্ষায় পাস না করলেও মিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। সেই কথাই জানালেন নুরে আলম নামে একজন। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমি নিজে নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সব কাজ করেছি। লার্নার কার্ড পাওয়ার দুই মাস পর যখন খিলক্ষেত বিআরটিএর অফিসে পরীক্ষা দিতে যাই, তখন পাস করায় না। যদিও আমার পরীক্ষায় সবকিছু ঠিকঠাক করেছি। এভাবে আমাকে দুবার ফেল করানো হয়। তৃতীয়বার যখন দুই হাজার টাকা দিয়ে দালাল ধরলাম সেইবার পরীক্ষা না দিয়েই পাস।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা হস্তান্তর, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও গাড়ির নিবন্ধনসহ যে কোনো কাগজপত্র সম্পাদন সাধারণ প্রক্রিয়ায় সহজেই সম্পন্ন করতে পারেন না সেবাগ্রহীতারা। নানা ক্রটি-বিচ্যুতির কথা বলে মানুষকে দালালদের দিকেই ঝোঁকানো হচ্ছে।
‘আমরা দু’ঘন্টায় সব কাজ করতে পারি’ দম্ভোক্তি করেই বলেন বিআরটিএর খিলক্ষেত অফিসে দালালের কাজ করা দারোয়ান সুদেব বাবু। প্রতিবেদকের ছদ্ম পরিচয়ে গ্রাহক ভেবেই বলে চললেন, ‘তিন হাজার টাকা দিলেই পরীক্ষায় পাস করিয়ে ফিঙ্গার ও ছবি তোলার কাজ শেষ করে দিতে পারব। পরীক্ষায় কি লিখলেন, না লিখলেন সেটা আমি দেখব। টাকা দেবেন, দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। শুধু আপনার রোল নম্বরটা দেন।’
হেল্প ডেস্কে সেবা নেই বলেই দালাল চক্রের দৌড়ঝাঁপ এমন মন্তব্য যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘বিআরটিএর সার্কেল অফিসের হেল্প ডেস্কগুলো থেকে প্রত্যেকের সমস্যা সুনির্দিষ্টভাবে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা হচ্ছে না দেখেই দালালরা সুযোগ নিচ্ছে।’
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে সাড়া দেননি। যদিও অন্য একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি দাবি করেন, ‘বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান করে দালালদের শাস্তির আওতায় এনেছেন।’ দালালমুক্ত করতে তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছেন।
জানা যায়, বিআরটিএর সেবাগ্রহীতাদের কাজ সহজ করার জন্য অনলাইনে গুটিকয়েক সেবা দিচ্ছে সংস্থাটি। কিন্তু বেশিরভাগেরই এসব সেবা নিয়ে বিস্তর জ্ঞান নেই। পেশাদার লাইসেন্স নেয়া বেশিরভাগ চালক অনলাইনে এসব সেবা নেয়ার বিষয়ে তেমন দক্ষ নয়। ফলে বিআরটিএ অফিসে এসেই তারা সব কাজ সারছেন। অনলাইনে করলেও বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় করতে হচ্ছে। সেখানেও বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।
বিআরটিএ থেকে জানানো হয়েছে, বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করা যায় এবং এটি দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাচ্ছে।
তা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা আরও স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত করার লক্ষ্যে যেদিন পরীক্ষা হবে ওই দিনে ফল দেয়ার কার্যক্রম চালু হয়েছে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য গ্রাহককে কমপক্ষে পাঁচবার বিআরটিএ অফিসে যেতে হয়।
পরীক্ষার দিনই বায়োমেট্রিক্স নেয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যাতে করে বায়োমেট্রিক্স দেয়ার পর বিআরটিএ অফিসে আসতে না হয়। পরীক্ষা শেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার ফলাফল ওই দিনই বিআরটিএর-আইএস সিস্টেমে এন্ট্রি হচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার দিনই পরীক্ষার ফলাফল বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে দেখতে পারেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি জমা দিলে তাদের স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাকযোগে গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
কালের আলো/ডিএস/এমএম