শেখ হাসিনা সভাপতি, ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক : আওয়ামী লীগের চমকের সম্মেলন আজ

প্রকাশিতঃ 12:01 am | December 24, 2022

কালের আলো রিপোর্ট:

আজ শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগ আগেই বলে আসছে এবারের সম্মেলন হবে সাদামাটা। ফলে অতীতের মতো নেই আলোর ঝলকানি। বৈশ্বিক সঙ্কটে কৃচ্ছ্রসাধনে পুরো রাজধানীকে হয়নি সাজানো। তবুও সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-আগ্রহ রয়েছে। এবারের কাউন্সিল হবে একদিনের। এদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে কাউন্সিলররা বেছে নিবেন আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে পুনর্বার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এটি শতভাগ নিশ্চিত। ১৯৮১ সালে দলের সভানেত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। এবারও কাউন্সিলরদের ভোটে দশমবারের মতো সভানেত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দলের জন্য তিনি ‘অপরিহার্য’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রতিবার কাউন্সিলেই চলে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু দলের কাউন্সিলর এবং নেতাকর্মীদের তীব্র আপত্তি এবং আবেগের কাছে শেষ পর্যন্ত তিনি পরাস্ত হন। এবারও এ রকম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে সাধারণ সম্পাদক। তবে এবারও ইতিহাস গড়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই পদে হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন এটিও নিশ্চিত। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিরল মাইলফলক স্পর্শ করবেন। তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যমণ্ডিত ও গণমানুষের দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের বহাল থাকাই এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে বড় ‘চমক’। কারণ, আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিও প্রথমবারের মতো ঘটতে যাচ্ছে। অতীতে প্রয়াত দু’নেতা জিল্লুর রহমান ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা দু’বার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী বছরের এপ্রিলে তিনি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ফলে এবারের সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে যিনি এগিয়ে থাকবেন পরবর্তীতে ওই সময় তিনিই দল পরিচালনায় নেতৃত্ব দিবেন। পরশু ওবায়দুল কাদের নিজেও পরের সম্মেলন আগাম হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন।

জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে বড় ধরনের রদবদল না হওয়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডিয়ামে প্রবেশ করবেন। সেক্ষেত্রে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও অনেক যোগ্যরা দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। যদিও সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।

সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তার ‘রানিংমেট’ হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে বহাল রাখার মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন না। সামনের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, এজন্য নতুন সাধারণ সম্পাদক এনে দলের ভেতরে কোনো রকম নিরীক্ষার সুযোগ নিতে চাইছে না তিনি।

জানা যায়, সম্মেলনে সারা দেশ থেকে সাড়ে ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ২৫ হাজার ডেলিগেট অংশ নেবেন। প্রত্যেককে দেওয়া হবে শুভেচ্ছা উপহার। এই তালিকায় রয়েছে- দলীয় লোগোযুক্ত নোটপ্যাড, কলম, চকলেট, বিস্কুট, পানি, টিস্যু, ফাইল ফোল্ডার, গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি তুলে ধরে প্রকাশনা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট, দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার তোলা শোক প্রস্তাব ও অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়কের বক্তব্য। বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই অধিবেশনে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতৃত্বে কারা আসছেন সেটি নির্ধারণ হবে। নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলন মঞ্চ। মঞ্চের পাশে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সম্মেলনের ব্যানারে থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি। এছাড়া জাতীয় চার নেতার ছবি থাকবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক ও মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের ছবিও দেখা গেছে।

দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সক্রিয় উপস্থিতি। বঙ্গবন্ধু পরিবার থেকে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান সিদ্দিক ববি রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনেই তারা নেতৃত্বে আসুন। গত শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভায় বেশ কয়েকজন নেতা প্রসঙ্গটি দলীয় সভানেত্রীর নজরে আনেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সবাই বড় হয়েছে। রাজনীতিতে আসবে কি আসবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, হতে পারে। এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

কালের আলো/এসবি/এমএম