নতুন দু’সমরাস্ত্রে আরও সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা, সক্ষমতা বাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 10:33 pm | December 06, 2022

কালের আলো রিপোর্ট:
বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পেশাদার ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সরবরাহ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী যুদ্ধ অস্ত্র। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে এবার সেনাবাহিনীর সাজোয়া বহরে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক লাইট ট্যাংক ভিটি-৫ এবং কিউডব্লিউ১৮ আলফা সারফেস-২ এয়ার মিসাইল সিস্টেম।
আধুনিক এই দু’সমরাস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। গৌরবদীপ্ত সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। নির্ভরতার সোনালী দিগন্তের প্রতীক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে মাতৃভূমির স্বাধীনতা, অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্রতে অনুপ্রাণিত করেছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নিজ বাহিনীকে।
তিনি বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সর্বাত্মক সহায়তায় বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের পথ সুগম হচ্ছে। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা, অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমুহকে দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এ ধরনের আরও আধুনিক সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্তির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’
মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরে নতুন সংযোজিত অত্যাধুনিক লাইট ট্যাংক ভিটি-৫ এবং আর্টিলারি রেজিমেন্টে কিউডব্লিউ১৮এ মিসাইল সিস্টেম অন্তর্ভুক্তিকরণ অনুষ্ঠানে ফোর্সেস গোল-২০৩০’র বাস্তবায়নে সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে দীপ্যমান করে তোলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান।

ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সকল শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার সুযোগ্য নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সর্বাত্মক সহায়তায় বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের পথ সুগম হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নতুন সংযোজিত অত্যাধুনিক লাইট ট্যাংক ভিটি-৫ এবং কিউডব্লিউ১৮ আলফা সারফেস-২ এয়ার মিসাইল সিস্টেম আমাদের আভিযানিক সক্ষমতাতে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। তাই আমি সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর এই অগ্রযাত্রায় এবং আমার উপর আস্থা রাখা এবং সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সকল প্রকার সহায়তা প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’
সেনাবাহিনীর সাজোয়া বহরে যুগান্তকারী সংযোজন
নতুন সংযোজিত লাইট ট্যাংক ভিটি-৫ এবং কিউডব্লিউ১৮ আলফা সারফেস-২ এয়ার মিসাইল সিস্টেম নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের দুটি অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বলে জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আধুনিক যুদ্ধে প্রযুক্তির ব্যবহার, ভূমির প্রতিবন্ধকতা ও রণকৌশলের সুবিধাগত দিকসমূহ বিবেচনা করে ট্যাংক ভিটি-৫ এবং কিউডব্লিউ৮০ আলফা সারফেস-২ এয়ার মিসাইল সিস্টেম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাজোয়া বহরে একটি যুগান্তকারী সংযোজন।

এই ট্যাংকের হান্টার কিলিং, থার্মাল ইমেজিং এএবং লেজার ওয়ার্নিং সিস্টেম আধুনিক সমরাঙ্গনে ট্যাংকের সর্বোচ্চ রণকৌশলগত ব্যবহার নিশ্চিত করবে। অপরদিকে কিউডব্লিউ৮০ আলফা সারফেস-২ এয়ার মিসাইল সিস্টেম অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারিকে আরও কার্যকরী করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা, অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমুহকে দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এ ধরনের আরও আধুনিক সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্তির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সেনা সদরের বিভিন্ন পরিদপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত
সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত বলে জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলাসহ দেশের আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ভবিষ্যতেও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে।’
সেনাপ্রধান মনে করেন, এই পবিত্র ও গুরুদায়িত্ব পালনের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন এবং সমর সক্ষমতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা পরিকল্পিতভাবে এবং পর্যায়ক্রমে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংযোজনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জ্বিত এবং প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ শুধু দেশের আস্থার প্রতীকই নয় বরং পেশাদারী উৎকর্ষতায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সমভাবে স্বীকৃত।
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, ‘পেশাগত দক্ষতা ও মানবতার সেবায় ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। যা আমাদের সকলের জন্য একটি বড় অর্জন এবং গৌরবের বিষয়।’

নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ
প্রতিটি সেনা সদস্যের নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করব প্রতিটি সেনা সদস্য সমরাস্ত্রে আধুনিকায়নের পাশাপাশি নিজেদের যথাযোগ্যভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে সমরাস্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারে আমরা সক্ষম হই। আমাদের মনে রাখতে হবে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের সর্বত্র প্রস্তুত রাখা প্রতিটি সেনাসদস্যের নৈতিক দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা কঠোর পরিশ্রম, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও দৃঢ় কর্তব্য নিষ্ঠায় নিবেদিত হয়ে এই আধুনিকায়ন ট্যাংক ও মিসাইল সিস্টেমকে কার্যোপযোগী রাখার জন্য সদা সচেষ্ট থাকবেন। এছাড়া সকল সমরাস্ত্রের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে সকল অবকাঠামোগত সুবিধা উন্নয়নের সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
সর্বোপরি আপনারা সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধ এর মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রয়োজনের সর্বদা নিয়োজিত থাকবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আপনাদের সকলের উত্তরোত্তর সাফল্য উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করছি।’

জিওসিকে ধন্যবাদ, সর্বোচ্চ ত্যাগের অঙ্গীকার
দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজ ও বর্ণিল আয়োজন’র জন্য ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশমাতৃকার সেবার সর্বোচ্চ ত্যাগে অঙ্গীকার অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল মোঃ আবু সাঈদ সিদ্দিক, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ, এবং কক্সবাজারের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি’র এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ শরীফ উদ্দিন সরকারসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে