উপহার হিসেবে বই বা গাছ চান শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:26 pm | October 08, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

অন্যান্য উপহার নয়, যদি দিতেই হয় তবে বই কিংবা গাছ দিতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আমাকে সম্মান জানানোর জন্য কোনও উপহার দেওয়ার দরকার নেই। যদি আমাকে কিছু দিতেই হয়— তাহলে আমাকে একটি বই দেবেন না হয় একটি ছোট গাছ দেবেন। ছোট বলে বিপদে পড়ে গেছি। যেখানে যাই বনসাই দিয়ে দেয়। এখন বনসাই দিলে তো অনেক দাম। পরে বলেছি— গাছ দিলে ৫০/১০০ টাকার যেকোনও একটি গাছ দেবেন।

‘কিছু দিন আমি যত্ন নেবো, তারপর বড় হয়ে গেলে কোথাও লাগিয়ে দেবো। আপনাদের কাছে আমার অনুরাধ— বনসাই গাছ পরিচর্যায় কী করতে হয়, সেটি মানুষকে জানিয়ে দেবেন। তাহলে অনেকে যারা যত্ন নিতে জানেন না, সে কারণে তারা হয়তো করেনও না। সে কারণেই জানিয়ে দেওয়া ভালো।’

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে রেডিয়েন্ট বনসাই সোসাইটি আয়োজিত ‘১২তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে এখন গাছ লাগানোর একটা চর্চা হচ্ছে। আমার নিজেরও বাগানের ভীষণ শখ, অসম্ভব রকমের শখ আছে। আমার একটি যৌথ উদ্যোগ আছে। আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে। তিনি যত্ন নেন। আমি ওর প্রসংশা করি। আপতত এ অবস্থায় আছে। যদি অবসরে যাওয়ার সুযোগ হয় এবং বেঁচে থাকি তাহলে হয়তো নিজে যত্ন নিতে পারবো। গাছের পরিচর্যাও ভালো অভ্যাস। শরীর ও মনের জন্য ভালো।

তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্বটাতে এই যে জলবায়ু পরিবর্তন, শীতকাল ছোট হয়ে গেছে, বর্ষাটা এলামেলো, গ্রীষ্ম ভীষণ রকমভাবে চেপে বসেছে আমাদের ওপরে। এ জলবায়ু পরিবর্তন কারও জন্যই ভালো না। সারা পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে, নানান ধরনের রোগ-বালাই হবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, আগে ঋতুর সঙ্গে যে ছন্দটা ছিল, সেই ছন্দেরও পতন ঘটছে। আমরা যেন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি, আর খারাপ দিকে না যাই, এজন্য গাছের যত্ন নিতে হবে। সবুজের বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। যারা বড় আকারের প্রকৃতিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসার নান্দনিকতার চর্চা করেন, তাদের প্রতি শুভকামনা। বনসাই হয়তো বাংলাদেশে শিল্প হিসেবে শক্ত-পোক্তভাবে দাঁড়িয়ে যাবে।’

পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীর দায়িত্ববোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু হবে— ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে, সেই শিক্ষাক্রমে আমরা সব কিছু করে শেখার জায়গাটায় নিয়ে যাচ্ছি। এটির একটি প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষার বেশ কিছু কাজ শুরু করেছিলাম। এর একটি প্রকল্প ছিল গাছ লাগানো। তার বাইরেও আমরা বলেছিলাম— প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি করে গাছ লাগাবে। সেই গাছ শিক্ষার্থী পছন্দ করবে— সে কোন গাছ, কোথায় লাগাবে। ওই গাছের জন্য কেমন মাটি লাগবে, কেমন করে যত্ন নেবে তা শিখবে। যত্ন নেওয়া এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করার জন্য অন্য একটি জীবনের প্রতি দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করা শেখানোর জন্য সেই প্রকল্পটা শুরু করা হয়েছিল।

আয়োজকরা জানান,দ্রুত নগরায়ণের এ সময়ে গাছের সৌন্দর্য আর অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে বহু প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বাড়িতে বাড়িতে বনসাইয়ের চর্চা করা জরুরি।

এবারের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য সজীব-সতেজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ৩২৮১ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার এম এ ওয়াহাব এবং ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা।

প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই প্রদর্শন করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা চাইলে বনসাই কিনতেও পারবেন। এক হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের বনসাই পাওয়া যাচ্ছে প্রদর্শনীতে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

কালের আল/ডিএস/এমএম