বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ও অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে জোর স্পিকারের

প্রকাশিতঃ 5:49 pm | September 21, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ও সকল পর্যায়ের অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বিশেষ জোর দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতির উপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘মানবজাতির প্রতি জাতির পিতার দর্শনই আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তি। এই ভিত্তিকে উজ্জীবিত রাখতে আমরা সকলে বদ্ধপরিকর থাকবো।’

তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জাতির পিতার এই দর্শন এবং বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ও সকল পর্যায়ের অংশীদারগণ সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়’র যৌথ ব্যবস্থাপনায় ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনামালঞ্চে বিশ্ব শান্তিতে বাংলাদেশের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। বৈশ্বিক শান্তির প্রতি তাঁর ছিল অকুণ্ঠ সমর্থন। তাই বিশ্ব শান্তিতে বাংলাদেশের ভূমিকা বৈশ্বিক শান্তির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবস্থান থেকেই অনুপ্রেরণা পায়। সমাজের সবাইকে টেকসই বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণকে ক্ষুধা, দারিদ্র, শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্ত করে শান্তি, সাম্য, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন। জনগণের জন্য তাঁর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শান্তির ধারণা। ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূল নীতিতে এ ধারণাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমেই সংবিধানের সফল প্রতিপালন সম্ভব।

স্পিকার বলেন, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় যেমন কূটনীতিকদের ভূমিকা রয়েছে, তেমনই সংসদ সদস্যরাও সংসদীয় কূটনীতির চর্চা করেন। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের মতো বিভিন্ন ফোরামে তারা জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ বৈষম্য নিরসন, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন এবং নীতিগুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আজ শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

সেমিনারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা উল্লেখপূর্বক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি সামগ্রিকভাবে শান্তিরক্ষীদের সার্বিক অর্জনকে তুলে ধরেন। পাশাপাশি এই অর্জনকে সমুন্নত রেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

সেমিনারের অপর বক্তা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে বাংলাদেশের কুটনৈতিক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানের সার্বিক বিষয়সমূহ উল্লেখপূর্বক বক্তব্য প্রদান করেন। উভয় বক্তা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের এবং বাংলাদেশের কুটনৈতিক উদ্যোগের অন্তরায়সমূহ উল্লেখপূর্বক ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনারও প্রস্তাব করেন।

এছাড়া রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক, প্রফেসরিয়াল ফেলো, এস আই পি জি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তণ সিনিয়র সচিবও পররাষ্ট্র সচিব, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের কুটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বক্তারা, আগত অতিথি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব সেমিনারকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। এ সময় সকলের মাঝে প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আতিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে শান্তি রক্ষায় চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বছর আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হল- ‘বর্ণবাদের অবসান, শান্তি বিনির্মাণ।’

এই ধারণাকে সামনে রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সক্রিয় এবং গৌরবময় ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সকল স্তরের অংশীদারদের জন্য একটি সার্বজনীন সহায়ক ক্ষেত্র প্রস্তুত করাই হবে এই সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য।

এই সেমিনারে আমন্ত্রিত সংসদ সদস্যরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টা ও ডিফেন্স এ্যাটাশেগণ, বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, সশস্ত্র বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আমন্ত্রিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, বিশিষ্ট শিক্ষা ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম