অদম্য মেধাবী সেই সাদেকুলের পাশে পুনাক সভানেত্রী

প্রকাশিতঃ 7:51 pm | October 10, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে রাস্তার পাশে শরবতের দোকান। শরবত বিক্রি করছেন ১৯ বছর বয়সি এক তরুণ। তবে অন্যান্য শরবত বিক্রেতা থেকে তিনি যে আলাদা তা দেখলেই বুঝা যায়। কারন এই তরুণ দোকানের ভিড় কমে গেলেই বই হাতে নিভৃত মনে পড়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর সড়কবাতির আলোতে পড়াশোনা করে এভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির।

এই তরুনের নাম সাদেকুল ইসলাম। বাবার নাম মো. জার্জিস আলী। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পশ্চিম বামনাইল গ্রামে। ১১ ভাইবোনের মধ্যে সাদেকুল সবচেয়ে ছোট।

সীমাহীন দারিদ্র‍্যতার কষাঘাত আর বিভিন্ন অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য লড়াই করা এই তরুণ জীবন ও জীবিকার তাগিদে কখনও রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছেন, কখনো করেছেন সবজি বিক্রি। আর এখন পথের ধারে বিক্রি করেছেন লেবুর সরবত। তবুও থেমে যাননি, জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন। চালিয়ে গেছেন লেখাপড়াও। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ ফাইভও। আর বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে।

সম্প্রতি এই অদম্য মেধাবীর জীবনের নানাদিক ও তাঁর অদম্য মেধা আর এগিয়ে চলার গল্প প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইনে।

সেখান থেকে বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার। এরপর তাঁর আন্তরিক উদ্যোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সাদেকুলের বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করে।

জানা যায়, সাদেকুল খুবই পরিশ্রমী ও মেধাবী। রাজশাহী শহরে থেকে তিনি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেন। হাফেজিয়া শেষ করার পর টিউশনির পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেন। নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায় বসবাস করার সময় নওগাঁর কয়েকজনকে ভ্যানগাড়িতে করে শরবতের ব্যবসা করতে দেখে তার এ পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তাঁদের কাছ থেকে শরবত বিক্রির প্রাথমিক ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে গরমের সময় শরবতের চাহিদা থাকলেও শীতে ব্যবসায় মন্দা থাকে। এ জন্য তিনি ফুডপান্ডায় যোগ দিতে চান। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (সম্মান) বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা।

সাদেকুলের ইচ্ছার কথা শুনে তার পাশে দাঁড়ান পুনাক সভানেত্রী। তাঁর উদ্যোগে সাদেকুল পেয়েছেন সাইকেল, হেলমেট ও মুঠোফোন।

রোববার (১০ অক্টোবর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) হেডকোয়ার্টার্সে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি, আরএমপি আয়োজিত সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে জীশান মীর্জার পক্ষে সাদেকুলকে সাইকেল, হেলমেট ও মুঠোফোন দেওয়া হয়।
এতে এই অদম্য মেধাবী ফুড পান্ডার খাবার সরবরাহ করে আরও বেশি আয় যেমন করতে পারবেন, একইভাবে নিজের পড়ালেখার জন্যও সময় বের করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন পুনাক সভানেত্রী ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-এর স্ত্রী জীশান মীর্জা।

এ সময় তিনি সাদেকুলের সঙ্গেও কথা বলেন। আরএমপি কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন)মো. সুজায়েত ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. রশীদুল হাসান পিপিএম, বিশেষ পুলিশ সুপার এ এফ এম আনজুমান কালাম, বিপিএম (বার) এবং আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কালের আলো/এনএল/এমএইচএ