৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন ৯৫ হাজার মানুষ
প্রকাশিতঃ 10:26 am | July 17, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
করোনাভাইরাস মহামারিকালে ৩৩৩ নম্বরে কল করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে দরিদ্র, কর্মহীন ও অসহায় মানুষ। এ নম্বরে কল দিয়ে সাড়ে তিন মাসে ৯৫ হাজার ২২৫ জন খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফোনকলের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তিদের এ সহায়তা দেওয়া হয়। তবে ভাতা বা ভিজিডি সুবিধাভোগী না হলে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা কেজি দরে চাল) বা সরকারি যে কোনো ত্রাণ না পেলে, মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার বেশি না হলে, পরিবারের সদস্যসংখ্যা তিনজনের অধিক হলে এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি হলে শুধু ৩৩৩ নম্বরে কল করে এ খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়। এ চার ক্যাটাগরির আওতায় যারা পড়বেন, তারা শুধু কল করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পাবেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত এ ক্যাটাগরির আওতায় ৪ লাখ ২৬ হাজার ৩১২ জন কল করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৬ জন খাবার পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন। খাদ্য সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন নম্বরসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এটুআই প্রকল্পের প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ৯৫ হাজার ২২৫ জন খাদ্য সহায়তা। বাকি কলের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৫৫ জন খাবার সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। বাকি ২ লাখ ৯ হাজার ৫৭১টি কল অন্য তথ্য নিয়েছে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিনিষেধে দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন ‘৩৩৩’ (সরকারি তথ্য ও সেবা) নম্বরটি কাজে লাগাচ্ছে সরকার। একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে চলা হটলাইনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এসব সহায়তা দিচ্ছে। হটলাইন আগে থেকে চললেও খাদ্য সহায়তার বিষয়টি মাঝে বন্ধ ছিল। ২৫ এপ্রিল থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার সেবাটি আবারও সচল করা হয়।
ওইদিন সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শুরুতে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে সরকার ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এতে ১ কোটি ২৪ লাখ পরিবার উপকৃত হবে। খাদ্য সহায়তা পেতে যে কেউ ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে তাকে তালিকাভুক্ত করে তার বাড়িতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, ২৫ এপ্রিল ফোনকল চালুর পর থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশের ৯৫ হাজার ২২৫ জন মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যারা পাওয়ার যোগ্য, তাদের দেওয়া হচ্ছে।
তবে অনেকে ভুল তথ্যও দেন। যেমন, শুরুর দিকে মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তি সহায়তার জন্য ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু সহায়তা দিতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির তিনতলা বাড়ি। ৩৩৩ নম্বর হটলাইনের কর্মকাণ্ড যাচাই করতে কল করেছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেন। তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটুআই প্রকল্পের প্রতিনিধিদের মেসেজ সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওর কাছে পাঠানো হয়। তিনি (ইউএনও) তার এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্টাফদের মাধ্যমে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই শেষে খাদ্য সহায়তা দেন। এজন্য প্রতিটি উপজেলায় আলাদা করে প্রয়োজন অনুসারে ত্রাণ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এটুআই প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট দিদার-ই-কিবরিয়া বলেন, ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে একাধিক সেবা পাওয়া যায়। এর মধ্যে করোনা মোকাবিলা ও জরুরি খাদ্যসহ অন্যসব সেবার জন্য প্রথমে ‘৩৩৩’ গিয়ে তারপর ‘৩’ চাপ দিতে হয়। প্রথমে আইভিআর (কম্পিউটার ভয়েজ রেকর্ড) থেকে চারটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। যেমন-ফোন করা ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি ত্রাণ বা ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) বা ১০ টাকা কেজি দরে চাল পেয়েছেন কি না? পরিবারের সদস্যসংখ্যা তিনজনের অধিক কি না? মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার বেশি কি না? পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি কি না? এসব প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত জবাব মিললেই শুধু ওই ব্যক্তির কল একজন প্রতিনিধির কাছে ট্রান্সফার করা হয়। কাঙ্ক্ষিত জবাব না মিললে কল রেকর্ডে থাকলেও তা ত্রাণের কল বলে গণ্য হয় না।
জামালপুরের সরিষাবাড়ির ইউএনও শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, বিধিনিষেধ চলাকালে ৩৩৩ নম্বরের ফোনকলের ভিত্তিতে সরিষাবাড়ি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সের আশাপাশে বাড়ি হলে অফিস থেকেই মোবাইল ফোনের মেসেজ যাচাই-বাছাইয়ের পর খাদ্য বিতরণ করা হয়। আর দূরে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে আমাদের স্টাফরা বাড়িতে সহায়তা পৌঁছে দেয়। এর প্রতিবেদন জেলা অফিসে পাঠানো হয়।
এদিকে ৩৩৩ নম্বরে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য এ উপজেলায় প্রচুর মেসেজ আসে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী সদরের ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা।
তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে ৬০/৭০টি মেসেজ আসে। সতর্কতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, একটি পরিবারের জন্য ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলুসহ নানা খাদ্যপণ্য দেওয়া হয়। অসহায়-গরিব মানুষ ঠিকমতো সহায়তা পেলেন কি না, তা মনিটরিং করা হয়। চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে তা জেলায় পাঠানো হয়।
তবে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী ইউএনও হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য ৩৩৩-এ প্রতিদিন প্রায় একশর মতো মেসেজ পাই। কর্মহীন অনেক মানুষ ট্রিপল থ্রিতে কল করেন। তাদের প্রয়োজন মতো খাদ্যসামগ্রী বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
এদিকে অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ৩৩৩ নম্বর হটলাইনে কলে খাদ্য সহায়তার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার পায়নি। খাদ্যপণ্য কিনতে রাজধানীর রামপুরা বাজারে টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়ানো রহিমা খাতুন বলেন, ‘ফুনে কল দিলে নাকি খাবার দেয় হুনছি, তয় ক্যামনে কল দ্যায় তা জানি ন্যা।’
এক্ষেত্রে এর প্রচারণা চালানো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কালের আলো/এমএ/এমআরবি