একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্যারান্টি প্রধানমন্ত্রী’র, মিডিয়া নিয়ে আক্ষেপ

প্রকাশিতঃ 9:20 pm | September 02, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
সব সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যেও একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গ্যারান্টি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ইনশাল্লাহ নির্বাচন হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। জনগণ সঙ্গে থাকলে কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেনের সন্দেহ-সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের কাছে প্রশ্ন তারা বা তিনি আদৌ নির্বাচন চান কিনা। তিনি যদি গরম বক্তৃতা দেন, ধরে নিতে হবে তার প্লেন রেডি।’

রোববার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিমসটেক সম্মেলন শেষে এর গুরুত্ব তুলে ধরতে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ‘বে অব বেঙ্গল ইনেশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক) সম্মেলনে যোগ দিতে সরকারি সফরে নেপাল যান। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তিনি দেশে ফেরেন।

আরো পড়ুন
সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর মৃদু হাসি

বি.চৌধুরী ও ড.কামাল হোসেনের জোট গঠনের উদ্যোগকেও স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের এই উদ্যোগ, ঐক্যকে সাধুবাদ জানাই। ঐক্য হোক, একসঙ্গে হয়ে ভোটটা করুক। বিকল্প একটা জোট থাকুক।’

আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা-বিশ্বাস আছে। আমার কোনও আকাঙ্খা নেই। জনগণ যদি উন্নতি চায়, কল্যাণ চায়, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আমাকে জয়যুক্ত করবে। তবে আমি এটুকু মনে করি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে সুদিন আসবে না, আসবে দুর্দিন। এটা আমি নিশ্চিত।’

‘জনগণ আমাকে না চাইলে আমার কোনও দু:খ নেই’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে কাজ করেছি জনগণের জন্যে, জনগণ ভোট দিলে দেবে, না দিলে কিছু করার নাই।’

আরো পড়ুন
‘খালেদা জিয়াকে আমি গ্রেফতার করিনি’

‘টিভিতে আমাকে রাখে চার-পাঁচ নম্বরে’
টিভি চ্যানেলে বিএনপিকে ফেবার করা হয়, এমন আক্ষেপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেসরকারি টেলিভিশন আগে ছিল না। আমিই দিয়েছি। অথচ সেই টেলিভিশনে তাদের (বিএনপি) ফেবার করে। আমাকে রাখে চার-পাঁচ নম্বরে। অথচ তারা (বিএনপি) পার্লামেন্টে নেই। তারা বৈধ বিরোধী দলেও নেই। আমাদের মিডিয়ার কাছে বিএনপিই বিরোধী দল, তারাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন সেই প্রসঙ্গটিও আবারো ওঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ কিছু কিছু রিপোর্ট পড়ছিলাম। তাদের (বিএনপি) আমলে যে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়া, আন্তর্জাতিকভাবেও বহু কাহিনি রয়েছে। তবে, তাদের সৌভাগ্য যে মিডিয়া সবসময় তাদের ফেবার করে। আমি তো থাকি আপনাদের প্রত্যেকটা টেলিভিশনের হয় তিন নম্বর, নয় চার বা পাঁচ নম্বরে।’

‘আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো’
‘খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর যখন বাসায় দেখতে গেলাম, তারা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো, ভেতরে ঢুকতে দিলো না। সেই দিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আর তাদের সঙ্গে আমি বসবো না, কোনও আলোচনা হবে না’ বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

আরো পড়ুন
‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর আওতায় একশ বছরের পরিকল্পনা করেছি’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা যে যা-ই বলেন না কেন, ক্ষমতায় থাকি আর না থাকি, তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার একটা আতœসম্মানবোধ আছে। অপমানের একটা সীমা আছে। যারা দিনের পর দিন আমার বাড়িতে এসে পড়ে থাকতো, তারা যখন আমার মুখের ওপর দরোজা বন্ধ করে দেওয়া সাহস রাখে, আমি তখন তো অ্যারেস্ট করিনি। যখন তারা পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারলো, তখনই অ্যারেস্ট করা উচিত ছিল। তখন আমি সহনশীলতা দেখিয়েছি। মানুষগুলোকে সাহায্য করেছি।’

‘আইনজীবীরা প্রমাণ করুক খালেদা নির্দোষ’
‘বিএনপির এত নামিদামি আইনজীবী, ব্যারিস্টার অমুক-তমুক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা কেন পারলো না প্রমাণ করতে যে খালেদা জিয়া নির্দোষ, তারা এতিমের টাকা নেয়নি। তাহলে এখানে আমাদের দোষ দিয়ে লাভটা কী। তবে তাদের নেত্রী বন্দি হয়ে আছে, তাদের আন্দোলন কই? তারা আন্দোলন করুক।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি হুঙ্কার দিচ্ছে নির্বাচন করবে না। সেটা তাদের দলের ওপর নির্ভর করবে, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের কি করার আছে? বিএনপি যদি মনে করে নির্বাচন করবে না, তাহলে করবে না। এখানে তো আমাদের বাধা দেওয়ারও কিছু নেই বা দাওয়াত দেওয়ার কিছু নেই, এটাই পরিষ্কার কথা।’

‘খালেদার প্রিয় ব্যক্তিরাই তখন ক্ষমতায়’
কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা আওয়ামী লীগ দেয়নি বলে পুনরায় বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ওই মামলার সময় তারই (খালেদা) প্রিয় ব্যক্তিত্বরা তখন ক্ষমতায়। যখন তিনি (খালেদা জিয়া) মানুষ পুড়িয়ে মারলো, তখনই অ্যারেস্ট করা উচিত ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল, বাসস

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email