‘পরিবহন ধর্মঘটের নেপথ্যে নৌমন্ত্রীর ফেডারেশন’

প্রকাশিতঃ 12:13 am | August 04, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন শুক্রবারে (৩ আগস্ট) সারাদেশে অঘোষিত যানবাহন চলাচল বন্ধ করার নেপথ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। দেশকে অচল করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কাজকে বাধা দিতে এই সংগঠনটি এর আগেও এমনভাবে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল।’ নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এই ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী শুক্রবার (৩ আগস্ট) বিকেলে এই তথ্য জানান।

শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী বলেন, ‘অতীতে যারা শ্রম আইন পরিপন্থী যখন-তখন ধর্মঘট ডেকে সরকারকে জিম্মি করতে চেয়েছিল সেই একই চক্র আজকে (শুক্রবার, ৩ আগস্ট) পরিবহন খাতে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকেছে। অঘোষিত এই ধর্মঘট সম্পর্কে বিভিন্ন জেলার পরিবহন নেতারা বলছে যে তাদেরকে ওপর থেকে ধর্মঘট ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে যে উপরের নির্দেশের কারণেই তারা গাড়ি বন্ধ রেখেছে। অথচ এই নেতারা কিন্তু তাদের দাবি সম্পর্কেও জানে না। অথচ তারা অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই চক্রটি এর আগে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ একাধিক সময়ে অঘোষিতভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারকে অচল করা এবং সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়া।’

এই চক্রটি কারা, কাদের নির্দেশে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী বলেন, ‘এই সংগঠনটি হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। পরিবহন শ্রমিকদের এই সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাই বিএনপিপন্থী। তাই সংগঠনটি সরকারকে অচল করতে এমন কাজ করছে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে সামনে রেখে এই মহল সারাদেশে পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে। এই সংগঠন শ্রম আইন, নীতি কিছুই মানে না।’

এই সংগঠনের নেতৃত্বে কারা আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. ইনসুর আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, তিনি সরকারের নৌমন্ত্রী। আঃ রহিম বক্স দুদু সহ-সভাপতি (১), তিনি জাতীয়বাদি শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক এবং খুলনা জেলার বিএনপির সঙ্গে জড়িত।

ওসমান আলী হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক, তিনি বাসদ (বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী।’

পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে করণীয় সম্পর্কে মো. ইনসুর আলী বলেন, ‘পরিবহন শিল্পের নৈরাজ্য এবং অরাজকতা দীর্ঘ দিনের। মালিক, শ্রমিক এবং সরকার সবাই যদি মিলে একসঙ্গে বসে আলোচনা করে তবে এই অরাজকতা বন্ধ হবে। ছোট-বড় সবগুলো সংগঠন নিয়ে একসঙ্গে বসে আলোচনা করলে সমাধান এবং সড়ক খাতের শৃঙ্খলা ফিরবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন চালকরা মালিকদের থেকে প্রতিদিন চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় গাড়ি চালায়। প্রতিদিনের চুক্তির অর্থ পরিশোধের জন্য চালকরা প্রচুর চাপে থাকে। তার ওপর টার্মিনালে চাদা, পথে পথে চাদা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও চাদা দিতে হয়। এজন্য চালকরা কোনো উপায় না দেখে বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে থাকে।

এভাবেই তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। অথচ পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকা যদি অন্য কর্মজীবিদের মতো বেতন ভিত্তিক করা যায় তবে এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি পরিবহন খাতেও শৃঙ্খলা আনা সম্ভব।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রথম দিনের আন্দোলন সঠিক ছিল। পরবর্তী সময়ে অনুপ্রবেশকারীরা এই আন্দোলনে ঢুকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার বিএনপি এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতিতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

একান্ত আলাপ করার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী।

জরুরী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট সড়কে অনাকাঙ্খিত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং ওই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, দশিক্ষার্থীদের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের মধ্যে কুচক্রি মহল প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নি-সংযোগসহ দেশের সাধারণ মানুষের জনমনে আতঙ্কসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এই সুযোগে অতীতে যেভাবে সরকারকে অবগত না করে হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

ওই একই অশুভ শক্তি বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ পরিপন্থী, অনৈতিকভাবে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে দেশ্যব্যাপি অঘোষিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনজীবনে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। আমরা এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email