সুযোগ সন্ধানী চালক, ময়মনসিংহ টু ঢাকা ভাড়া ৫’শ টাকা!

প্রকাশিতঃ 12:05 am | August 04, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এমন গণপরিবহন সঙ্কট চরম দুর্ভোগ বয়ে এনেছে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য।

শত বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে যারা জীবন-জীবিকার তাগিদে গন্তব্যে ছুটতে চাচ্ছেন তাদেরকে গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া। নানা ছলছুতায় যাত্রীদের ‘পকেট’ কাটছে ছোট ছোট যানবাহনের চালকেরা। কর্মমুখী মানুষগুলো যেন ‘সুযোগ সন্ধানী’ এসব চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তবে নারী ও শিশুদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বেশি।

বিশেষ করে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যেতে এনা পরিবহনে মাত্র ২২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও গণপরিবহন সঙ্কটের সুযোগে প্রাইভেটকার চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন ৫’শ টাকা ভাড়া।

শুক্রবার (০৩ আগষ্ট) দুপুরে নগরীর ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের দিগারকান্দা বাইপাস গোলচত্বরে ঘন্টাখানেক অবস্থান করে দেখা মিললো এমন চিত্রের।

গাজীপুরের জয়না এলাকায় যাবেন ইউনুস আলী (৪৫) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বাস চলাচল না করায় নগরীর মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হেঁটে হেঁটে বাইপাস গোল চত্বরে এসেছেন। এখানে ছোট ছোট যানবাহনই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে মূল ভরসা। কিন্তু এই ভরসাই যেন আবার তাদের জন্য রীতিমতো ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউনুস আলী বলেন, ‘পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে গোটা জাতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা মন চাইলেই গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। ধর্মঘট করেন। আমাদের জীবন নিয়ে এরাই ছিনিমিনি খেলে। তাদের কারণেই দেড়শ’ টাকার ভাড়া তিনশ টাকা দিতে হয়।’

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে শ্রীকৃষ্ণ (৪৫) অপেক্ষা করছেন প্রাইভেটকারের জন্য। কিন্তু বনিবনা হচ্ছে না। চালকদের সঙ্গে হরহামেশাই বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘তীব্র পরিবহন সঙ্কটে আমাদের অসহায় যন্ত্রণায় পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে।’

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার মহাখালী যাবেন আনোয়ার হোসেন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন এই পয়েন্টে। কিন্তু বিভিন্ন যানবাহনের চালকের অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকানোর কারণে অপেক্ষা আর ভোগান্তিই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর সামনে। শেষ পর্যন্ত ৫’শ টাকা ভাড়ায় একটি প্রাইভেটকারচেপে গন্তব্যে ছুটেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক কারণে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা অনিরাপদ অজুহাত তুলে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা আর কতদিন দেশের মানুষকে এভাবে জিম্মি করে রাখবেন? এবার এর একটি সুরাহা হওয়া উচিত। আমাদের ভোগান্তি হলেও ওদের আর ছাড় নয়।’

এই পয়েন্টে অবস্থান করে দেখা গেছে, মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোন যানবাহনই চলছে না। স্বল্প দূরত্বে সিএনজি চালিত অটো রিকশা, লেগুনা ও পিকআপের মতো যানবাহন চললেও সেসব যানবাহনে ওঠে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে
যেতে হচ্ছে।

এক্ষেত্রে প্রাইভেটকার নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে, এই কারণে ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে, জানান এক প্রাইভেটকার চালক সানোয়ার (৩০)।

তবে অতিরিক্ত ভাড়ার চেয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ক’দিন পর পর অযৌক্তি ধর্মঘটের বিষয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক যাত্রী বলেন, নিরাপত্তার অভাবে বাস চলাচল বন্ধ রাখার কথা বললেও আসল কথা হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন।

প্রতিবারই যাত্রীদের জিম্মি করে সরকারকে নমনীয় করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এবারো আইন পাস না হলে শ্রমিকরা আরো বেশি আগ্রাসী ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠবে। সড়ক সন্ত্রাসের রাশ আর টেনে ধরাই সম্ভব হবে না।’

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email