‘৭ দিন আগে ধর্মমন্ত্রীর ছেলের হুমকি অত:পর পৈশাচিক কায়দায় যুবলীগ নেতাকে হত্যা’

প্রকাশিতঃ 11:33 pm | August 02, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘পৈশাচিক ও নৃশংস কায়দায় ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগ সদস্য শেখ আজাদকে (৩৫) মোবাইলে হুমকি দিয়েছিলেন ধর্মমন্ত্রীর গুণধর ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত। শান্ত বলেছিলেন, আজাদের কলিজা ছিড়ে ফেলবেন। বাস্তবেও তাই হয়েছে। শান্ত’র পালিত সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন আজাদ।

প্রথমে গুলি করে এরপর কুপিয়ে, জবাই করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু কী তাই? যুবলীগের এই নেতার বুক ছিন্নভিন্ন করে বের করে আনা হয়েছে কলিজা। অর্থাৎ, খুনিরা মন্ত্রীর ছেলের নির্দেশ পালন করেছে অক্ষরে অক্ষরে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নিহত আজাদের বিধবা স্ত্রী দিলরুবা আক্তার দিলু (৩২)। এই সময় তাঁর সঙ্গে একমাত্র শিশু পুত্র শেখ অর্ণব (৫), আজাদের হতভাগ্য মা সুফিয়া খাতুন (৫০)সহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

আজাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার দিলু সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে শান্ত হুমকি দিয়েছিলো আমার স্বামীর কলিজা কত বড়। কেন তাঁর সঙ্গে টক্কর দিয়েছে। তাঁর গ্রুপ ছেড়ে আজাদ মেয়রের গ্রুপে গেছে। এর বদলা সে নিবে। আমার স্বামীকে পৈশাচিকভাবে খুনের পর শান্তকে খুনিরা কলিজা দিয়া আসছে। শান্ত এবং মন্তু বাবু’র মোবাইল ট্র্যাক করলেই সব জানা যাবে। আমি মোহিত উর রহমান শান্ত’র বিচার চাই। সব খুনিদের ফাঁসি চাই।’

আজাদ শেখকে মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুরে হত্যার আগে সন্ত্রাসীরা তাকে সদর উপজেলার আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এই তথ্য জানিয়ে হত্যাকান্ডের আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রহস্যজনক ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন স্ত্রী দিলরুবা। তিনি বলেন, ‘আমি ডিবি পুলিশকে গিয়ে বলি, আমার স্বামীকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে। এরপরও পুলিশ কোন কথা শুনে নাই। ওরা আমার স্বামীকে গুলি ও জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’

নিজের স্বামীর হত্যাকান্ডের জন্য ধর্মমন্ত্রীকেও একহাত নেন অকাল বৈধব্যের শিকার এই নারী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, তিনি একজন ধর্মমন্ত্রী। মানুষ খুন করাই কী তাদের ধর্ম? তিনি তার সন্তান মোহিত উর রহমান শান্তকে কী শিক্ষা দিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীকে বলবো, যুবলীগ করার পরেও আমার স্বামীকে কেন হত্যা করা হলো?’

তিনি বলেন, ‘আমাকে আর ছেলেকে কেন বিধবা ও পিতৃহারা করা হলো? আমার স্বামী তো বিএনপি-শিবির করতো না। যুবলীগের রাজনীতি করতো। এরপরেও কেন তাকে হত্যা করা হলো?’

এর আগে মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সদর উপজেলার স্থানীয় নাজির বাড়ি এলাকায় ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজাদ শেখকে (৩৫) গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। পরে বিকেল ৩ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘আজাদকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের একটি মহল নানা অনৈতিক কাজ করাতো। আজাদ তাদের কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সুপথে ফিরে আসতে পক্ষ বদল করেছিল। সুস্থভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই পক্ষ তাকে বাঁচতে দিলো না। তার জীবন কেড়ে নিলো। আমরা এই হত্যাকান্ডের জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, মাস ৬ আগেও ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত’র একান্ত অনুসারী ছিলো আজাদ শেখ। এরপর সম্পর্কের অবনতি হলে আজাদ শেখ তার গ্রুপ ত্যাগ করেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু’র নেতৃত্বাধীন গ্রুপে যোগ দেন।

মূলত এই নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকার শেখ ফরিদের সঙ্গে গত দুই মাস যাবত দুই পক্ষের সংঘর্ষ ছিল ওপেন সিক্রেট। প্রায় সময়েই গুলাগুলিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকা। প্রতিটি সময়ই পুলিশ নীরব ছিল বলে অভিযোগ করেন আজাদ শেখের পরিবার। তাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভিডিও:

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email