প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চাঙ্গা ও অনুপ্রাণিত মাঠ প্রশাসন

প্রকাশিতঃ 5:46 pm | July 29, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘প্রয়োজনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন’ এমন স্পষ্ট মন্ত্র মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শিখিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস, মাদকসহ সব ধরণের অপরাধ নির্মুলে ‘শুন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি গ্রহণ করতে তাঁর জোরালো নির্দেশনা রীতিমতো উজ্জীবিত করেছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

সামনের দিনগুলোতে তৃণমূলের কর্মকর্তাদের কার্যক্রমেও প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা নতুন গতি সঞ্চারের পাশাপাশি ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করবে এমনটি মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। তাদের ভাষ্যে- চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি দমনে দলমত বাছ বিচার না করে ব্যবস্থা গ্রহণে স্বয়ং সরকার প্রধানের এমন ‘ক্লিয়ার ম্যাসেজ’ মাঠ প্রশাসনেও নিয়ে আসবে চাঙ্গাভাব।

অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র মাস পাঁচেক আগে এবারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা জেলা পর্যায়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি হবে। প্রশাসনের ওপর অঘোষিত বা ঘোষিত কোন প্রভাব বলয় থাকবে না।

নিয়ম ও আইনের বাইরে কেউ পথ চলতে পারবে না। উন্নত দেশগড়ার পাশাপাশি আইনের নিজস্ব যাত্রার দ্বারও উন্মোচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট এসব বক্তব্য সাধারণ মানুষও স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ২৩ টি নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণের সামনে সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার প্রধান হতে পারি। আমি কিন্তু জাতির পিতার কন্যা। আপনাদের সেটাও মনে রাখতে হবে। আমরা সমাজ থেকে অশুভ তৎপরতা নির্মূল করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।’

তিনি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চাপমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে- ‘এখানে আমি বলতে চাই, বিনা দ্বিধায় আপনারা এই টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস এবং মাদক নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে সেগুলো দেখার কোনো দরকার নেই। যদি কেউ বাধা দেয়, আপনারা সরাসরি আমার সঙ্গে বা আমার অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সাল থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ৮ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হয় বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই)।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে মাঠের কর্মকর্তাদের নিবিড় সেতুবন্ধন রচনা ও কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সরকারের নীতি ও কর্মসূচিসমূহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কী কী সমস্যা রয়েছে এবং কীভাবে এগুলো সমাধান করা সম্ভব এসব নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন।

আরো জানা গেছে, বরাবরের মতো এই সম্মেলনেও ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তিনি মাঠের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহযোগিতার প্রত্যাশার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও করণীয় গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজর রাখার। একই সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে তাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করে সেবার মনোভাব নিয়ে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন পালনের কথাও বলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী এসব নির্দেশনায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করবো। এমন নির্দেশনা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

শুধু তাই নয়, তাঁর বক্তব্য আমাদের আরো ভালোভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করবে। নতুন উদ্দম, নতুন শক্তি নিয়ে আমরা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বো’ যোগ করেন নতুন এই বিভাগীয় কমিশনার।

ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মিজানুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমাদের দারুণভাবে উজ্জীবীত করেছে। তিনি উদ্দীপনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। তিনি আপন করে আমাদের কাজের কথা বলেছেন। আমরা সবাই খুব খুশি।’

একই বিষয়ে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঈনুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ সব সময় হয় না। এটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। প্রধানমন্ত্রীর ২৩ টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা একযোগে নিবিষ্টমনে কাজ করে যাবো।’

সূত্র মতে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে গোটা বিশ্ব যখন হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখন এসব অপরাধ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর সরকারের মাদক বিরোধী ‘অল আউট’ কর্মসূচিও সাধারণ মানুষ ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। চলমান এই যুদ্ধও সফলতার মুখ দেখার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সরকারের অনমনীয় মনোভাব পরিস্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সেবার মনোভাব নিয়ে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরতার পাশাপাশি সঠিক অবস্থানে না থাকেন তবে উন্নয়নযাত্রা ব্যাহত হতে বাধ্য এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কালের আলো’র সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘সব ধরণের অপরাধ দমন ও নির্মূলে বরাবরই প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন। এবারো সরকার প্রধানের দৃঢ় নীতি আমাদের মুগ্ধ করেছে।

তিনি প্রশাসনকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে যে উৎসাহ ও সাহসিকতার সঙ্গে ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সেটা দেশ পরিচালনায় সরকারের একটি সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহি:প্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাবো।’

কালের আলো/এএ/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email