এভাবে আর বিএনপির কতদিন!

প্রকাশিতঃ 4:25 pm | July 07, 2018

::মাহবুব রেজা::

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি আসলে কি চেয়েছিল তা নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যেই রয়েছে বিতর্ক, সন্দেহ আর পরস্পরবিরোধী অবস্থান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন আগের কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণযোগ্য হওয়ায় বিএনপি কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল, এই ব্যাকফুট অবস্থা থেকে দলটি কোনো অর্জন নিজেদের ডেরায় তুলতে না পেরে সর্বশেষ গাসিক নির্বাচনকে তারা গিনিপিগ হিসেবে বেছে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে চেয়েছিল। মহলটি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলছেন, এই নির্বাচনের শুরু থেকে বিএনপি হেরে যাবে এটা ধরে নিয়েই দলটি একটা ‘গা-ছাড়া’ ভাব দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একজন প্রার্থীর বিপরীতে অতি প্রবীণ রাজনৈতিক অঙ্গনে যার অবস্থান প্রায় নিভু নিভু এমন এক প্রার্থীকে বেছে নিয়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঠেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে। বিএনপির রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ভুলের কারণে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে এই নির্বাচনে জয়লাভ হয়েছে অনেকটা ‘দুধ-ভাত’ রকমের। তারা আরও বলছেন, আসলে বিএনপির রাজনীতির লেজে-গোবরে অবস্থা যে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তার বড় উদাহরণ এই নির্বাচন।

মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচনে বিএনপির হেরে যাওয়া বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে থেকে গাসিক নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের কয়েকজনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও অবস্থানও এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ তো করেছেই উপরন্তু দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমানকে নির্বাচনে নাশকতা তৈরির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক করার মধ্যে দিয়ে গাজীপুরবাসীর কাছে আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে আসলে বিএনপি এই নির্বাচনকে কিভাবে নিয়েছে। গাজীপুরের ভোটাররা দেখেছেন স্থানীয় বিএনপিতে কি চলছে। তিনি আরও জানান, বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের রাজনৈতিক জীবনে দলবদল, নীতির প্রতি আপস করার ইতিহাস তাকে নানা কারণে ভোটারদের কাছে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। এছাড়া বিগত দিনে মেয়রের দায়িত্বে থাকা বিএনপির এম এ মান্নানকে মনোনয়ন না দেওয়ার কারণে মান্নান সমর্থকরা ভোটের মাঠে হাসান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে এমন আভাষ দেওয়ার পরও দল কিভাবে হাসান সরকারকে মনোনয়ন দিলেন এসবের হিসাবও নেওয়া দরকার। এই নেতা জানান, গাসিক নির্বাচনে বিএনপির যেসব নেতা নিজেদের রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির হিসাব মেলাতে গিয়ে তারা হাসান সরকারকে নির্বাচনে নামিয়ে বলি দিয়েছেন তাদের স্মরণে আনা উচিত সামনের জাতীয় নির্বাচনে এই বলি দেওয়ার খেলাধুলা তাদের ওপরেও বর্তাতে পারে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলকে সরকার দলের জন্য অর্জন বলে উল্লেখ করে বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, দেউলিয়াপনার কারণে এই নির্বাচনে জয়লাভের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সামনের দিনে অনুষ্ঠিতব্য তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার বেড়েছে বলে ধরে নিয়েছে। তারা বলছেন, ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা গাসিক নির্বাচনকে যেরকম গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল বিএনপি সেভাবে নেয়নি। দলটির সিনিয়র নেতাদের গাজীপুরে দেখা গেলেও মহাসচিবকে নির্বাচনের প্রচারাভিযানে দেখা যায়নি যা নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জানা যায়, গাসিক নির্বাচনের বিপর্যয় নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে শুরু হয়েছে উত্তপ্ত কথাবার্তা। পরস্পরবিরোধী তুলোধোনা। বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা দলের সিনিয়র নেতাদের লাভ- ক্ষতির হিসাবে এভাবে দলের বারোটা বাজুক তা আর তারা চান না। এ নিয়ে তারা সামনের দিনে হার্ডলাইনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এই নেতাদের সমর্থন করে লন্ডনে বার্তাও পাঠিয়েছেন। যদি দলের ভেতর এদের আধিপত্য চলতে থাকে তাহলে আগামী দিনে বিএনপি নামে যে একটি রাজনৈতিক দল ছিল তা খুঁজে বের করতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে বলে বিএনপির মধ্যম সারির এসব নেতা মনে করছেন।

মাহবুব রেজা: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

Print Friendly, PDF & Email