পদ্মা সেতুর পৌনে এক কিলোমিটার দৃশ্যমান

প্রকাশিতঃ 5:14 pm | June 29, 2018

সিনিয়র প্রতিবেদক, কালের আলো:

পদ্মা নদীর জাজিরাপাড়ে গিয়ে লাগলো স্টিল স্ট্রাকচারের পদ্মাসেতু। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর পৌনে এক কিলোমিটার অংশ।

শুক্রবার (২৯ জুন) দুপুর ২ টার আগেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসিয়ে দেওয়া হয়।

এসময় ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, প্রাকৃতিক নানা জঠিলতার কারণে পদ্মাসেতুর কাজে বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর কারণে নিধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিন-না বিষয়টি আরও দু’একমাস পর বলা যাবে।

এছাড়া সেতুর ৫৩ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।।

সকাল থেকে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের কাছাকাছি স্প্যান নিয়ে যাওয়া প্রক্রিয়া চলে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দুপুর ২ টায় আগেই স্প্যান বসে পড়ে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের। এর মাধ্যমে জাজিরা পাড়ে পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলো।

এখন থেকে মাঝনদী ও মাওয়া পাড়ে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে বলে জানান পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী।

এদিকে ৫ম স্প্যানসহ ৯ মাসে বসলো ৫ টি স্প্যান। আর ২৭১ টি পাইলের মধ্যে ১৫০টি পাইল বসানো হয়েছে। ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসে গড়ে উঠবে পদ্মা সেতু।

সেতু প্রকৌশলীরা জানান, পিলারের ওপর যেসব স্প্যান বসানো হচ্ছে তার শতভাগ স্টিলের তৈরি। স্টিল স্ট্রাকচার একেকটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৮০০ টন। এই ওজন প্রথমে ধারণ করে বিশেষ বিয়ারিং। এ বিয়ারিংয়ের ওপর গেঁথে থাকে স্প্যান। এ বিয়ারিংয়ের কারণে ব্রীজটির ওপর চাপ পড়লে এটি কাঁপতে থাকবে। যা সেতুর শক্তিমত্তার দিক বোঝাবে।

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর ৫টি স্প্যান বসানোর আগে পিলারের মাথায় যে বিয়ারিং বসানো হয়েছে তা বিশ্বে বিরল। ১০ টনের বেশি ওজনের এমন একেকটি বিয়ারিং ব্যবহার বিশ্বে বিরল। এর ফলে রিখটার স্ক্রেলে সাড়ে ৭ মাত্রায় ভূমিকম্প হলেও সেতুর গায়ে লাগবে না। পদ্মাসেতুতে ৯৬টি বিয়ারিং ব্যবহার করা হচ্ছে। যে বিয়ারিং স্থাপন করা আছে পিলারের ওপর আর স্প্যানের নিচে। আর স্প্যান যেখানে শেষ সেখানে আরেক স্প্যানের শুরু হয় জায়ান্ট অংশ।

একটি স্প্যানের সঙ্গে আরেকটি স্প্যান যুক্ত করতে প্রায় সপ্তাহ খানেক দিনরাত ওয়েল্ডিং দিয়ে জায়ান্ট লাগানো হয়।

সেতুর সুপারস্ট্রাকচারের একজন প্রকৌশলী জানান, স্প্যান বসিয়ে দেয়ার পরও স্প্যানে অনেক টুকটাক কাজ বাকি থাকে। তবে সেতুর কাজের হিসেবে তা ২ শতাংশও নয়; আরও কম। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে স্প্যান জায়ান্ট দেয়া এবং স্প্যানের ওপর স্লাব বসানো। স্লাব বসালেই সড়ক দেখা যাবে স্প্যানের ওপর। তবে এখন পর্যন্ত কোন স্প্যানের ওপরেই স্লাব বসানো হয়নি।

এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। পরে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান।

গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। সর্বশেষ ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। এরপর ২৯ জুন বসছে পঞ্চম স্প্যান।

কালের আলো/এমকে

Print Friendly, PDF & Email