মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে ‘বিশেষ’ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিতঃ 9:11 am | June 06, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানব পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনা ঘটনাটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আলোড়িত করেছে পুরো বিশ্বকে। এই ঘটনার পর দেশের মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারকারী চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, শতাধিক মানব পাচারকারীর একটি তালিকা করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এরমধ্যে কেউ ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক, কেউ দালাল চক্রের সদস্য। র্যাব জানায়, লিবিয়ায় মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে পাচারকারীদের অন্যতম হোতা কামালও রয়েছেন। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত ২২ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‌্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, সম্প্রতি লিবিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত অমানবিক। ভুক্তভোগীরা অবৈধভাবে পাচারের শিকার হচ্ছেন এবং অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে। মূলত মানব পাচারকারীরা তাদের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়াসহ অন্য দেশগুলোতে পাচার করছেন। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়, তাই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

লিবিয়াফেরত এক ভুক্তভোগী পাবনার আনিসুর রহমান জানান, দুই বছর আগে গ্রামের পরিচিত এক দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। তাকে সাগরপথে নিয়ে যাওয়া হয়। লিবিয়ায় নিয়ে তাকে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। ঠিকমতো খাবারও দিত না। প্রায় ৩ মাস এভাবেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল। একপর্যায়ে পালিয়ে দূতাবাসের সহযোগিতা নেন তিনি। তাদের সহায়তায় দেশে ফেরেন তিনি। তার মতো অনেকেই লিবিয়ায় গিয়ে চরম কষ্টে দিনানিপাত করছেন।

এদিকে গত ২৮ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা এবং আরো ১১ জন আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পল্টন থানার এসআই শাহিন উদ্দিন জানান, লিবিয়া ট্র্যাজেডির পর বৃহস্পতিবার রাতে পল্টন থানায় মানব পাচার এবং আঘাতে খুনের অভিযোগে হত্যা মামলাটি করা হয়। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়া ট্র্যাজেডিতে জড়িত ১৬ জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানব পাচার এবং সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে আরেকটি মামলা করেন এক ভুক্তভোগীর বাবা মান্নান মুন্সি। এ মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ।

গত ৩ জুন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে সেন্টু শিকদার ও নার্গিস আক্তার নামে দুই মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব। লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও সিআইডি।

সিআইডির ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় সারা দেশে ৯টি মামলা হয়েছে। ওইসব মামলায় এখন বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও বেশির ভাগ মানব পাচারকারী পলাতক। পল্টনে সিআইডির করা মামলার পাশাপাশি অন্যান্য মামলাও ছায়া তদন্ত করছে সংস্থাটি। তদন্তে মানব পাচারকারী হিসেবে যাদের তথ্য-উপাত্ত ও নাম উঠে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হবে। আদালতের মাধ্যমে ওয়ারেন্ট জারির পর ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হবে।

সিআইডির ডিআইজি আরো জানান, নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময় যে অর্থ-সম্পদ তারা করেছেন, এই সম্পদ তারা ভোগ করতে পারবেন না। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে সিআইডি। দেশি-বিদেশি যত প্রভাবশালী মানব পাচারকারী হোক না কেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের আলো/এসএ/এনএল