দেয়ালবন্দি হচ্ছে না ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠ

প্রকাশিতঃ 7:29 pm | June 05, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়। পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন অনেকেই। করোনার লকডাউনেও মধ্যেও প্রতিবাদে হচ্ছে মানব বন্ধন, দেয়া হচ্ছে কর্মসূচিও।

স্থানীয় প্রশাসন ও শহরবাসী যখন মুখোমুখি অবস্থানে তখন এ ব্যাপারে মুখ খুললেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু।

শুক্রবার(০৫ জুন) সকালে ফেসবুকে এই বিষয়ে তিনি একটি পোস্ট দেন। সেখানে মাঠের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। বলেছেন, দেয়ালমুক্ত এবং পরিবেশের সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রেখেই সকলের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, মাঠের চারপাশে দেওয়াল নির্মাণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। প্রয়োজনে নকশা পরিবর্তনের জন্যও তাদেরকে অনুরোধ করেছি। আশা রাখছি মাঠটি দেয়ালবন্দি হবে না।

প্রসঙ্গত, সোমবার ময়মনসিংহ শহরের ১৬ একর এলাকা বিস্তৃত আড়াইশো বছর পুরনো সার্কিট হাউজ মাঠের সীমানা প্রাচীর ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলক উন্মোচন করা হয়। এর পর থেকেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

এ বিষয়ে মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

”ময়মনসিংহের ঐতিহ্য সার্কিট হাউজ মাঠ, সবুজ-শ্যামলে ঘেরা বৃহৎ এই মাঠটি ময়মনসিংহের হৃদয় স্পন্দন, সেটি অনুধাবন করেই হয়তোবা সদ্যবিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব মাঠটিকে উন্নয়নের মাধ্যমে ময়মনসিংহবাসীকে সুন্দর একটি পরিবেশ উপহার দিতে চেয়েছিলেন, ধন্যবাদ জানাই তার এই উদ্যোগকে।

কিন্তু যারা কর্মপরিকল্পনায় সরাসরি দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা হয়তো নির্মল প্রকৃতির যে আবেদন ,সেটিকে সঠিকভাবে সদ্যবিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার সাহেবের কাছে সেভাবে তুলে ধরতে পারেননি। একজন পরিকল্পনাবিদকে হতে হয় সর্বমূখী, কিন্তু এক্ষেত্রে বলা যায়, যারা ছিলেন এর দায়িত্বে তাদের হয়ত হৃদয় অনুভূতি না থাকার কারণেই উন্নয়ন প্রকল্পটিকে প্রশ্নবৃদ্ধ করেছে।

এই উন্নয়ন প্রকল্পে বেশ কিছু অসংগতি থাকার কারণে প্রায় সর্ব শ্রেণি- পেশার মানুষ প্রতিবাদমুখর কিন্তু উন্নয়ন মানেই জনকল্যাণ, যে বিষয়টিকে বর্তমান সরকারের সফল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহোদয় সকল সময়ই গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করে থাকেন, প্রত্যেকটি উন্নয়নকে হতে হবে টেকসই এবং জনকল্যাণমুখী।

প্রকল্প গ্রহণের প্রাক্কালে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, পরিবেশবিদ, নাগরিক সংগঠন, সাংবাদিকদের সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ গ্রহণ করে প্রকল্পটি গ্রহণ করলে হয়তোবা আজকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হতো না আমাদেরকে।

বর্তমান এই প্রেক্ষাপটে সকলের একটি দাবি প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে দেয়ালমুক্ত উন্নয়ন চাই। সকলের এই প্রত্যাশাকে পূরণে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে, আশা করি দেয়াল মুক্ত এবং পরিবেশের সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রেখেই সকলের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ, মহান আল্লাহ পাক আমাদের হেফাজত করুন।”

প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিশাল আকৃতির সার্কিট হাউস মাঠের একপাশে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের ম্যুরাল এবং মাঠের চারপাশে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। কাজটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ।

ম্যুরাল নির্মাণকে স্বাগাত জানালেও মাঠে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানান নগরবাসী। কাজের ফলক উন্মোচনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদে মাঠেই মানববন্ধন করে মুক্তিযোদ্ধা, খেলোয়াড়, সংগঠক, রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ।

কালের আলো/বিএসকে/এমএম

Print Friendly, PDF & Email