ডিএসসিসিতে শুদ্ধি অভিযানে ‘শুভ বার্তা’ মেয়র তাপসের

প্রকাশিতঃ 9:05 am | June 02, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের শোরগোল উঠতেই মেয়র পদে নিজেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবেই আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিত করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দলীয় হাইকমান্ডের পছন্দের তালিকাতেও ছিল তাঁর নাম।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১০ আসনের টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে ঢাকাবাসীর নাগরিক সেবা বঞ্চনার দৃশ্য হতাশার পাশাপাশি পীড়া দিয়েছে শেখ পরিবারের এ সদস্যকে। ফলে বড় পরিসরে কাজ করার প্রয়োজন থেকেই মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি নিজেও। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে রেকর্ড ভোটে দক্ষিণের নগর পিতাও নির্বাচিত হন।

নাগরিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নিজের সিটি করপোরেশনে দুর্নীতির মুলোৎপাটনেই নজর দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহিদ শেখ ফজলুল হক মনি’র ছোটো ছেলে, মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

মেয়র পদে দায়িত্ব নিয়েই ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ও উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে বরখাস্ত করে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। একই সঙ্গে নিজের করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। নিজেকে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ২৪ ঘন্টার মেয়র হিসেবে।

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অ্যাকশন শুরু হওয়ায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নগর ভবনে অসৎ কর্মকর্তাদের মাঝে। মেয়র সাঈদ খোকনের জামানায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানো কর্মকর্তারা অনিদ্রা আর অস্থিরতায় সময় কাটাচ্ছেন।

তবে দক্ষিণের সিটি মেয়রের সময়োপযোগী এ শুদ্ধি অভিযানকে ‘শুভ বার্তা’ হিসেবেই দেখছেন সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাঁর দুর্নীতি বিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রশংসা কুড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মত দিয়েছেন।

জানা যায়, ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বেশ দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এ নেতার সঙ্গে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের সম্পর্কও বেশ নিবিড়।

এলাকার বাসিন্দাদের সুখ-দু:খে একাত্ম হওয়ার মানসিকতা দলমত নির্বিশেষে ভোটের মাঠে তাকে বরাবরই ফ্যাক্টর করে তোলে।

পাশাপাশি আইনজীবীসহ সুশীল সমাজ ও এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ব্যারিস্টার তাপসকে ঘিরে। ফলে এবারের সিটি নির্বাচনের দামামা বাজতেই তাপসের মনোনয়ন ইস্যুতে জোয়ার উঠে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে। হাইকমান্ডও সহজ জয় নিশ্চিত করতে তাপসের হাতেই তুলে দেন নৌকা প্রতীক।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্বগ্রহণ করেই অবৈধ আয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠা ডিএসসিসি’র শীর্ষস্থানীয় দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন। পরদিন নগর ভবনে মতবিনিময়কালে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দুর্নীতি এবং দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না বলে কঠোর বার্তা দেন।

দুই শীর্ষ কর্মকর্তার অপসারণের ঘটনায় কাঁপন শুরু হয়েছে ডিএসসিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে। তারা মনে করছেন, এই দুই কর্মকর্তাই শুধু নয় অন্যদের বিরুদ্ধেও শুদ্ধি অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র তাপস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মেয়র তাপস করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে নিখুঁতভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে নিজের কার্যক্রম শুরু হলেই কারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন, তাদের সারসংক্ষেপও প্রস্তুত হয়।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই দুর্নীতিবাজ ওইসব কর্মকর্তাদের অপসারণের মাধ্যমে কার্যত শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন নগর পিতা।

মেয়র তাপস ভোটের আগে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন ‘আমরা সুশাসিত ঢাকা চাই। যে সুশাসনের আওতায় আমরা পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবো। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দুনীর্তিমুক্ত সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো।’ মেয়রের চেয়ারে বসেও সেই বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। উল্টো গ্রহণ করেছেন অনড় অবস্থান।

ব্যারিস্টর শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনী অঙ্গীকার মোতাবেক তিনি আগামী পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করে এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখে, সবুজ, সচল এবং সুশাসিত ঢাকা গড়ে তুলতে কাজ করবেন। আর এ লক্ষ্যেই দায়িত্ব নিয়েই তিনি নিজের পাঁচটি অগ্রাধিকার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

করোনাভাইরাস মোকাবেলা, মশা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক ও অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, আবর্জনা পরিষ্কার এবং যানজট নিরসন রয়েছে তার অগ্রাধিকার পরিকল্পনায়। একটি শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন কর্মীবাহিনী গড়ে তুলে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতেই করপোরেশনে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের শক্ত ঝাঁকুনি দিয়েছেন।

সোমবার (১ জুন) মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে আয়োজিত এক সভায় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জনগণের স্বার্থে যেকোনো সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা পরিদর্শনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাবধান করে বলেছেন, পরিদর্শনকালে স্পটে কাউকে পাওয়া না গেলে তিনি আর ডিএসসিসিতে কর্মরত থাকবেন না। গৎবাঁধা পুরনো লোক দেখানো কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে এসে ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করে অর্জিত মেধা-দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নগরবাসীর সেবাদানে আন্তরিকভাবে কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন।

তাপসের দুর্নীতি বিরোধী কঠোর অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান একটি ইতিবাচক দিক। এর ফলে অন্য দুর্নীতিবাজরা কিছুটা হলেও সাবধান হবে। ভয়ে থাকবে।’

কালের আলো/এসআর/এমসি

Print Friendly, PDF & Email