শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে: আইজিপি

প্রকাশিতঃ 10:15 am | June 24, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যৌন হয়রানি ও অসদাচরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের সুদৃঢ় অবস্থান ও প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ পরিমার্জিত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর পুলিশ প্রধানদের দ্বিতীয় সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এসব কথা বলেন। শুক্রবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অপরাধের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আইজিপি বলেন, সহিংসতার ক্রম পরিবর্তনশীল রূপের প্রেক্ষাপটে অরক্ষিত মানুষকে রক্ষা করতে এবং অপরাধের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অসম হুমকিসংঙ্কুল পরিবেশে নিরাপদে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় রসদের সরবরাহ এবং কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা উন্নত করার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান।

আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী জাতিসংঘভুক্ত দেশের পুলিশ প্রধানদের দ্বিতীয় সম্মেলনে ২১ জুন মূলপর্বের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। যক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ২০ জুন দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধানদের এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন আইজিপি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ জুন বিকালে জাতিসংঘের ডেলিগেটস্ ডাইনিং রুমে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পুলিশ প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এ সম্মেলন শুরু হয়। ২১ জুন ছিল এ সম্মেলনের মূল কর্মসূচি। ওইদিন সকাল পৌণে ১০ টায় সাধারণ পরিষদ হলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশসদস্যসহ সকল নিহত শান্তিরক্ষীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্বের সূচনা করা হয়।

সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট মিজ্ মারিয়া লুইজা রিবিরো ভায়োট্টি। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জোসে র‌্যামস্-হোরতা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ পুলিশের ওপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

সম্মেলনের মূল আলোচনা অংশটিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জসমূহ, জাতিসংঘ পুলিশ, সহিংসতা প্রতিরোধ ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পুলিশের ভূমিকা এবং দায়বদ্ধতা ও কর্মদক্ষতা- এ তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়। আলোচনা পর্বগুলোতে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন (ডিপিকেও) এর প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া, ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে এবং জাতিসংঘের ডিপিকেও, ফিল্ড সাপোর্ট, হিউম্যান রাইটস্ বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধানগণ ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতি নির্ধারকগণ অংশ নেন।

বক্তারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশেষ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা, বিশ্বাস স্থাপন, সহিংসতার অগ্রিম সতর্কবার্তা সংগ্রহসহ মিশনসমূহকে কার্যকর রাখতে জাতিসংঘ পুলিশের বহুমূখী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

জনকেন্দ্রিক, আধুনিক, ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন, সহনশীল ও বিশেষায়িত জাতিসংঘ পুলিশ বিনির্মাণে মহাসচিবের রূপকল্পের কথা উঠে আসে আলোচনায়। উল্লেখ্য বিশ্বের ১৬টি পিস্ কিপিং মিশনে ৮৯টি দেশের প্রায় ১১ হাজার নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে আইজিপির বৈঠক:

আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গত ১৯ জুন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া এবং জাতিসংঘের পুলিশ অ্যাডভাইজর লুইস ক্যারিলহোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সভায় জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের গঠনমূলক ও সৃজনশীল ভূমিকা এবং অব্যাহত অবদানের প্রশংসা করেন। বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী পুলিশ বিশেষ করে নারী ফরমড্ পুলিশ ইউনিটসহ বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি, তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। জাতিসংঘ সদর দপ্তরস্থ ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন কার্যালয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম, ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ ও মিশনের মিনিস্টার ফাইয়াজ মুর্শেদ কাজী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া গত ২০ জুন সকালে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সকালে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) পুলিশ কমিশনার জেমস্ ও নেইল এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান টমাস পি. গ্যালাটির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কাউন্টার টেরোরিজম ও সাইবার ক্রাইমের মতো ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ দমনে দ্রুত সাড়া দানের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। এনওয়াইপিডি ও বাংলাদেশ পুলিশের মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময়ের বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্বের সাাথে আলোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে আইজিপি এনওয়াইপিডির জয়েন্ট অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ সেন্টার থেকে নিউইয়র্ক পুলিশের অপারেশন সমন্বয় ও মেগা ইভেন্টসমূহ পরিচালিত হয়। এনওয়াইপিডি কীভাবে অপরাধীদের মুখবয়াব চিহ্নিত করার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা বাংলাদেশের পুলিশ প্রধানকে দেখানো হয়। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের পেশাগত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়াও আইজিপি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও মিশনের কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

কালের আলো/এমকে/ওএইচ

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন আইজিপি, বক্তব্য রাখবেন জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে

Print Friendly, PDF & Email