দেশে প্রথম করোনার ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ উৎপাদন করলো এসকেএফ

প্রকাশিতঃ 7:10 pm | May 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন সম্পন্ন করেছে দেশের খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর শুক্রবার (০৮ মে) সকাল থেকে শুরু হয়েছে বাজারজাত করার প্রস্তুতি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা দেশবাসীকে এই সুখবর দিতে চাই যে বিশ্বে করোনার একমাত্র কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদনের সব ধাপ আমরা সম্পন্ন করেছি।’

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি এই ওষুধ সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত সপ্তাহে করোনার ওষুধ হিসেবে রেমডেসিভিরকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। জাপানের ওষুধ প্রশাসন ৭ মে থেকে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।

তবে কবে নাগাদ জাপান এর উৎপাদনে যাবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে সে দেশের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস ওষুধটি উৎপাদনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও খবরে জানা গেছে।

এ অবস্থায় এসকেএফই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল/গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হলো। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম ‘রেমিভির’।

সিমিন হোসেন বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন গত মার্চ মাসে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের পরপরই আমাদের ফর্মুলেশন বিজ্ঞানীরা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রেমডেসিভির নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এটি একটি শিরায় দেওয়া ইনজেকশন, সে কারণে এর উৎপাদনে সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। দুই মাস ধরে এসকেএফ কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এত কম সময়ে এটা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল উপাদান সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছি আমরা।’

এ সম্পর্কে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস-এর প্রধান মোহাম্মদ মুজাইহিদুল ইসলাম বলেন, ওষুধটির প্রতিটি ধাপের প্রস্তুতি আমরা শেষ করেছি। আগামী ১০ মে আমরা ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে ইনজেকশনটির স্যাম্পল পাঠাবো। আশা করি খুব দ্রুত আমরা বাজারজাত করার অনুমতি পাবো। আরও কিছু ধাপ আছে, সেগুলো সম্পূর্ণ করে কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা বাজারজাত করতে পারবো।

‘ওষুধের বাজারমূল্য পাঁচ হাজার পাঁচশ টাকা। যেসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হবে, শুধু সেখানেই এই ওষুধ পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ৫ থেকে ১০টি ডোজ দেবেন।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে করোনার একমাত্র কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদনের সব ধাপ এসকেএফ সম্পন্ন করেছে। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম দেওয়া হয়েছে— ‘রেমিভির’। এসকেএফই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল/গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।

১ মে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভিরের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। আক্রান্ত রোগী যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি বলেন, সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, রেমিডেসিভির প্রয়োগের ফলে করোনা আক্রান্ত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে রেমডেসিভির ওষুধ তৈরির জন্য ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেমিক্যাল ও ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে গিলিয়াড। ৭ মে গিলিয়াড সায়েন্সেসর প্রধান ড্যানিয়েল ও’ডে এক বিবৃতিতে বলেন, ভারত-পাকিস্তানসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গিলিয়াড স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ওষুধ সরবরাহের লক্ষে ইউনিসেফের সাথে আলোচনা করছে।

বিবৃতিতে ড্যানিয়েল ও’ডে বলেন, গিলিয়াড এসব দেশে উৎপাদনের সুবিধার্থে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। অবশেষে রেমডেসিভির উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ চুক্তিতে যাচ্ছে গিলিয়াড। আমাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে এশিয়া ও বিশ্বের উয়ন্নশীল দেশগুলোতে ওষুধ তৈরি শুরু করা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬৩ মানুষের ওপর এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা গড়ে ১১ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায়। করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ দিনের ডোজের প্রয়োজন হতে পারে। পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির ওষুধটি মূলত ইবোলার চিকিৎসায় তৈরি হয়।

কালের আলো/এনএল/বিআর

Print Friendly, PDF & Email