সিএমএসডি’র পরিচালককে প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ

প্রকাশিতঃ 6:41 pm | April 20, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ জেলায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২০ এপ্রিল) দীর্ঘ মতবিনিময়ের শেষ প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হলেন মহাখালী থেকে সংযুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে।

আরও পড়ুন: ‘দুর্যোগে ভেঙে পড়া যাবে না, শিগগির সংকট কেটে যাবে’

প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে কথা বললেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। এরপর তাঁর কথার সঙ্গে যোগ করে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমাদের সিএমএসডি’র ডিরেক্টর এখানে আছেন। আপনি কথা বলতে চাইলে তিনি উপস্থিত আছেন।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিএমএসডি’র (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) পরিচালকের সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। তিনি সবকিছু সাপ্লাই দেন।’ প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে কথা বলতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ।

আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে প্রতি জেলার দায়িত্বে একজন করে সচিব

প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনার সঠিক দিক নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় কোভিড-১৯’র জরুরি সংক্রমণ যেটা বাংলাদেশে হয়েছে সেই সংক্রমণ প্রতিরোধে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিছু তথ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি’ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বলছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘গতকাল পর্যদন্ত পিপিই গ্রহণ ছিল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪০টি। আমরা বিতরণ করেছি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ১১৯টি। মজুদ আছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯২১টি। পিপিই প্রতিদিন বিতরণের গড় হার ৬০ থেকে ৭০ হাজার।

আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আমরা বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা এবং কমিউনিটি হাসপাতাল পর্যন্ত পিপিই আমরা বিতরণ করি। এসব পিপিই স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, আমাদের এই সহায়তা দিয়ে আসছে। ৭০ ভাগই হচ্ছে স্থানীয় ও ৩০ ভাগ হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত, বিশেষ করে চীন দেশ থেকে।’

মাস্ক প্রসঙ্গ ও পিপিই’র পূর্ণাঙ্গ তথ্য
সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘এন-৯৫ মাস্ক সহজলভ্য না। এটা সবাই আমরা জানি। এর সমমান বা কাছাকাছি কেএন-৯৫, এফএফপি ২ বা পি ২ মাস্ক। এগুলো সম্পূর্ণই হচ্ছে বৈদেশিক আমদানি নির্ভর।

ইতোমধ্যে আমার কাছে প্রায় ২ লক্ষ কেএন-৯৫ ও এফএফপি-২ মজুদ এসেছে। এগুলো বিভিন্ন কোভিড হাসপাতাল ও পিসিআর র‌্যাব এবং অন্যান্য যেখানে সরাসরি নমুনা গ্রহণ করছে তাদের সুরক্ষার জন্য প্রেরণ করছি। এটা পর্যাপ্ত এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যাবে বলে আশা রাখছি।

আরও পড়ুন: চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য কিনবে সরকার

আমাদের হাতে কীটের মজুদও যথেষ্ট আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট প্রতিবেদন মাফিক বিভিন্ন পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হচ্ছে। পিপিই’র সাথে বিভিন্ন সামগ্রী সঙ্গে যায়। বিশেষ করে সার্জিক্যাল মাস্ক, গ্লোভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুড কভার ও বেড কভারসহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি পূর্ণাঙ্গ পিপিই’র তথ্য আপনাকে দিচ্ছি।

এর সঙ্গে অন্যান্য যেসব জিনিস সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় সেগুলো আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে দেখবো। আপনার জ্ঞাতার্থে এগুলো পেশ করলাম।’

ধন্যবাদ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) পরিচালকের দীর্ঘ উপস্থাপন শেষে প্রধানমন্ত্রী তাকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটা প্রশ্ন আছে, যে আমি আমাদের মন্ত্রীর কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি। যারা সাপ্লাই দেয় তারা সঠিকভাবে সঠিক জিনিসটা দিচ্ছে কিনা?

মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে, পিপিই নাম দিচ্ছে বেশ ভালো, কিন্তু জিনিসগুলো বোধহয় ঠিক মতো যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিত।’

সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘আপনারা দিয়ে দিচ্ছেন বলে দিচ্ছেন, কিন্তু যারা সাপ্লায়ার তারা ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা বা সঠিক জিনিস কিনছে কিনা। এটা একটু দেখা দরকার।’ আমি মন্ত্রীকে পাঠিয়েছি দেখার জন্য।’

আমরা চাচ্ছি ভুল যেন আর না হয়
প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা শ্রদ্ধাবনতচিত্তে গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারসহ একটি কমিটি করা আছে।

যে কমিটি যখন যে সরবরাহটা আসে সেটা পরীক্ষা করে দেখে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক পিপিই ফেরত দিয়েছি নিম্নমানের হওয়ার কারণে। যার পরিমাণ এক লাখ ৭০ হাজার।

আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করছি, দেশের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে হয়তো আমাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে। এখন আমরা চাচ্ছি, এই ভুলগুলো যেন আর না হয়। সঠিকভাবে আমরা যাতে বিতরণ করতে পারি সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’

সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে নজরদারির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সিএমএসডি’র পরিচালকের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী পুনরায় যোগ করে বলেন, ‘এন-৯৫ মাস্ক লেখা বক্স। কিন্তু ভেতরে যে জিনিসটা সেটা সঠিক থাকে কিনা, এটা একটু আপনাদের দেখা দরকার। এটা একটু নজর দেন।

এখানে যেহেতু লাইভে অনেকে আছে তাই বলছি না। কিন্তু লেখা আছে এন-৯৫ কিন্তু ভেতরের জিনিস কিন্তু সব সময় সঠিকটা যাচ্ছে না। যারা এ সাপ্লাই দিচ্ছে তারা ঠিক দিচ্ছে কীনা এটা দেখা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রর মুখ্য সচিবের নির্দেশনা
প্রধানমন্ত্রীর কঠোর দিকনির্দেশনার পর ভিডিও কনফারেন্সের সঞ্চালক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কথাগুলো মনে রাখবেন। স্বাস্থ্য সচিবকে আমি অনুরোধ করবো একদিনের মধ্যে এই বিষয়গুলো যাচাই করে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।’

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড.খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/জেএইচ/এএস

Print Friendly, PDF & Email