প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ, আতঙ্ক নয় প্রতিরোধের ডাক সেনা সদস্যদের (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 10:17 am | April 01, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

‘অপ্রয়োজনে কেউ বাসার বাইরে ঘুরাফেরা করবেন না। সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করবেন। যারা কেনাকাটা করছেন তারা হ্যান্ড গ্লাভস পড়বেন। সবাই নিজ নিজ বাসায় ফিরে যান।

আরও পড়ুন: প্রখর খরতাপেও পথে পথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সেনাবাহিনী (ভিডিও)

আপনারা কেউ এক জায়গায় সমবেত হবেন না। আতঙ্ক নয়, প্রতিরোধই পাড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে।’

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় এভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। চীনের পর ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যেও যেভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ সেখানে যেন নিরাপদ চালকের আসনেই রয়েছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে এক মোহনায় দেশ, মানুষকে ‘সুরক্ষার যুদ্ধে’ সেনাবাহিনী

সরকারের নির্দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মরিয়া যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে এ সংকটে অঘোষিত লক ডাউনে যেন থেমে গেছে গোটা দেশ। তবে আশার খবর হচ্ছে, এই সুযোগ রাজধানীর রুক্ষ প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। যান্ত্রিক কোলাহল আর ধূলার দাপট কমেছে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে।

বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে এখন মুখর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। সড়কের পাশে মিলছে সবুজের সমারোহ। পাখির কলতানে মুখর প্রকৃতি।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী

শীতল বাতাসে কানে আসছে ঝিঝি পোকার ডাক। ধূলামুক্ত সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে খুনসুটিতে মেতেছে দোয়েল, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখি।

সড়কের পাশে নানা রকম ফুলের রক্তিম আভা নগরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণ। বিপদের এমন সময়েও কেউ কেউ বেড়িয়েছেন প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাসের সন্ধানে।

আরও পড়ুন: বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

এমন মনোমুগ্ধকর আবহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী সতর্কতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষজনের খোঁজ খবর নিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।

নানাভাবে নাগরিকদের সচেতন করছেন। দেশের প্রতিটি এলাকাতেই কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্য আর ওষুধের দোকানে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব ঠিক করে দিচ্ছেন।

জেলায় জেলায় মসজিদ, হাসপাতাল ও সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিটানো হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। এর মাধ্যমে সড়কসমূহকেও নিরাপদ করা হচ্ছে।

সরকারি নিয়ম অমান্য করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অনেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষার মাস্ক।

হাত জীবাণুমুক্ত করতে দিচ্ছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আবার মানবিক হয়েই নিম্ন আয়ের মানুষজনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের দিচ্ছেন ভোগ্যপণ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চলমান প্রচারের অংশ হিসেবে জনসমাগম এড়িয়ে ঘরে থাকতে মাইকিং, মাস্ক বিতরণসহ জনগণকে আরও সচেতন করতে দিন-রাত কাজ করছেন।

আবার অনেক জেলাতে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে সেনাবাহিনী। রংপুর অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সহায়তা শুরু হয়।

ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সহায়তা ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম।

দিনব্যাপী ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অসুস্থ সুবিধাবঞ্চিত নারী-পুরুষের ব্যবস্থাপত্র, বিনামূল্যে ওষুধ, মাস্ক ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। মাইকে করোনা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচারও চালানো হয়।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার অংশ হিসেবে টহল জোরদারের পাশাপাশি হ্যান্ডমাইকে জনসাধারণকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।

পাশাপাশি আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়।

একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সড়কে সেনা সদস্যদের দেখা গেছে পথচারীদের হাতে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার অনুরোধ করতে। সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ঘরে ফিরেছেন পথচারীরাও।

দেশজুড়ে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন কার্যক্রমে প্রকৃতিতেও যেন শান্তির আভা লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি মানুষের মাঝে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে উঠছে।

এতে করে বায়ু ও পরিবেশেরও বিস্ময়কর পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। দেশের এমন পরিবেশ অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো এমন মত দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের কালের আলোকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য ভালো। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email