করোনা সতর্কতায় দেশব্যাপী সক্রিয় আনসার সদস্যরা, ছুটছেন বাড়ি বাড়ি

প্রকাশিতঃ 9:48 pm | March 27, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

মরণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) গোটা বিশ্বের মতো কাঁপিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকেও। এরইমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন ৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে। করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অঘোষিত ‘লক ডাউন’ এর মুখে গোটা দেশ।

সরকারের নির্দেশনা মেনে বেসামরিক প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে দেশের ৬১ টি জেলায় তৎপর রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। করোনার বিষয়ে সতর্কতা মেনে দায়িত্ব পালন করছে ৬১ লাখ সদস্যের বিশাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।

সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে করোনাভাইরাস নিয়ে ভয় দূর করে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালাচ্ছেন এই বাহিনীর প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার সদস্য। এতে করে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সাহসের সঞ্চার হচ্ছে।

অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনসার সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগ আর সচেতনতার মাধ্যমেই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন তারা।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পথচারীদের জন্য বেসিন স্থাপন করেছে এই বাহিনীটি। মাস্ক ও প্রচারণাপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তারা।

যেসব গ্রামে এক মাস আগে প্রবাসীরা ফিরেছেন তাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া তথ্য মোতাবেক ওইসব বাড়িতে লাল পতাকা ঝুলিয়ে ও স্টিকার লাগিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

একই সূত্র জানায়, সরকারের বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছাকাছি থেকে দায়িত্ব পালন করে থাকেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। তারা পুলিশের সঙ্গে থেকে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রজেক্ট সমূহে সব সময় দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধেও তারা আদাজল খেয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম.আসিফ ইকবাল কালের আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশজুড়ে জনসচেনতামূলক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা। সবাইকে সচেতন করতে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকজনের বাড়িতে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুরো বিষয়টি মনিটরিং করতে একাধিক কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ডিজি মহোদয় পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন।’

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি জেলায় জেলা কমান্ড্যান্ট-এর নেতৃত্বে ব্যাপকভাবে মাঠে নেমেছেন আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা। প্রতিটি ইউনিয়নে আনসার ও ভিডিপির দলনেতা ও দলনেত্রীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশ ফেরত মানুষদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। যারা হোম কোয়ারেন্টাইন থাকার নিয়ম মানছেন না, তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।

এই বাহিনীর সকল পর্যায়ের সদস্যরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সকল প্রকার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তারা বিশ্বাস করেন সবাই সচেতন হলে এবং সহযোগিতা করলেই মূলত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুষ্টিয়ার জেলা কমান্ড্যান্ট সোহেলুর রহমান কালের আলোকে জানান, সারা দেশের মতো কুষ্টিয়া জেলাতেও বিদেশ ফেরত মানুষজন সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে প্রায় এক সপ্তাহ যাবত নিবিষ্টমনে কাজ করছেন আনসার সদস্যরা। বিদেশ ফেরত প্রতিটি মানুষের বাড়ির সামনে একজন করে আনসার সদস্য সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখছেন।

তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রেখে রোগীদের সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ১২ জন সাধারণ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলসহ পুরো জেলায় ৩০ হাজার প্রচারণাপত্র বিতরণ করা হয়েছে।

এমনিতেই গ্রামের সুশীতল ছায়া নিবিড় পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে আনসার সদস্যরা মন্ত্রীদের বাসাবাড়িতেও অতন্ত্র প্রহরী হয়ে দায়িত্ব পালন করে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সরকারি বেসরকারি স্থাপনাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশাল এই বাহিনীর প্রায় ৬১ লাখ সদস্য।

এই বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় দেশের জাতীয় সংকটময় ও জরুরি মুহুর্তে বাহিনীর কর্মতৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠর মানুষজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়েছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শরীফ কায়কোবাদ কালের আলোকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে থেকে আমাদের প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার সদস্য করোনা প্রতিরোধে কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিটি গ্রামে এক থেকে দুই শতাধিক মানুষজনের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে।

তিনি জানান, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি গ্রাম, উপজেলায় এবং ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টারগুলোতে আমাদের কর্মকর্তারা বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনেও পোস্টার সাঁটানো, লিফলেট বিতরণসহ ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যও সড়কে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করতে বেসিন স্থাপন করে।

সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক ও সাবান বিতরণ করা হয়। গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে আতঙ্ক নয় সচেতন হতে। এছাড়াও যাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন গ্রাম ও উপজেলায় সেই বাড়িগুলো মার্ক করে লাল পতাকা লাগিয়ে দিয়েছি আমরা। এর মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়।

মেজর জেনারেল শরীফ কায়কোবাদ আরও জানান, এখনও প্রতিটি গ্রাম বা ইউনিয়নে যখনই সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের কাছে সহায়তা চাচ্ছে সেখানেই তাদের সর্বাত্নক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কালের আলো/এসএম/আরআর

Print Friendly, PDF & Email