করোনা ইস্যুতে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ আ.লীগ

প্রকাশিতঃ 11:02 am | March 16, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিনে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পরিবর্তন করেছে। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনার প্রভাব পড়েছে সরকারি দলের মুজিববর্ষের কর্মসূচিতে।

এছাড়াও গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা বাতিল করেছে দলটি। শুধু শ্রদ্ধাঞ্জলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে দলীয় কর্মসূচি।

রোববার(১৫ মার্চ) আগামীকাল ১৭ মার্চ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করে এবার নির্ধারিত কয়েকজনকে নিয়ে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। করোনা প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা হিসেবে দলের চলতি মাসের পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক কর্মসূচিও স্থগিত করেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শুধু দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলটির নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়। তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের কাছে বিশেষ গুরুত্বের মাস মার্চ।

এ মাসজুড়ে থাকে দলটির নানা আয়োজন। এবারের মার্চে বাঙালির মহানায়ক ও অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী হওয়ায় এবং সরকারের মুজিববর্ষ উদ্যাপনে বছরব্যাপী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির আয়োজন থাকায় মাসটি ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের আয়োজনও ছিল অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সারা দেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে গুছিয়ে রাখলেও করোনায় দেশীয় ঝুঁকি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি সীমিত আকারে ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে উদ্যাপন করতে হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আয়োজন করোনার কারণে পুনর্বিন্যাস করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে ভাইরাসটি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৪৯টি দেশ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির পরিবর্তিত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সভার আলোচ্য বিষয় ছিল মুজিববর্ষ নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পরিবর্তিত ও পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দলের সভাপতির অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ও সারা দেশের জেলা, উপজেলা, মহানগর এমনকি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যন্ত আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপনের নির্দেশনা দিয়েছি।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবে। সেখানে শিশু সমাবেশ, বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। একই দিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বনানীর করাইল বস্তি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এতিম ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।

১৭ মার্চ রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ উপলক্ষে সারা দেশে একযোগে আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এবং গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। ঢাকার রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে রাত ৮টার পরে একযোগে সব গণমাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রচার হবে।

অন্যদিকে করোনার বিস্তার ঠেকানো ও প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসমাবেশের আয়োজন করার বদলে আওয়ামী লীগ এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে চিকিৎসকদের পরামর্শসম্মত পদ্ধতিকে। জনসমাবেশ এড়িয়ে কয়েকজন মিলে লিফলেট বিতরণ করছেন। করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা, লিফলেট বিতরণ ও এ সম্পর্কে মানুষের করণীয় কী, সে বিষয়ে মূল দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো মাঠে থেকে জনগণকে সচেতন করছে। বিশ্বব্যাপী এই দুর্যোগের সময় মানুষকে সচেতন করা ও মানুষের জন্য কাজ করাটাও মুজিববর্ষ উদ্যাপনের একটি অংশ বলে মনে করে দলটি।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে দলটির সারা দেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করার নির্দেশ ছিল। ৪৪টি জেলায় সময়স্বল্পতাসহ কিছু কারণে তখন সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এসব জেলায় চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্মেলন করার টার্গেট ছিল দলটির। এ লক্ষ্যে কার্যক্রমও চলছিল। মার্চ মাসের শুরুতেই একাধিক জেলায় সম্মেলনের আয়োজনও হয়। করোনার প্রভাবে সাংগঠনিক জেলায় দলের তৃণমূলের সম্মেলনও স্থগিত।

কালের আলো/এনআর/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email