সেই পাপিয়ার ‘শেল্টার’ ছিলেন এমপি হিরু, সমালোচনার ঝড় নরসিংদীতে

প্রকাশিতঃ 8:49 pm | February 23, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের কারবার করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছেন। জড়িত ছিলেন তদবির বাণিজ্যেও। রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিনে সুন্দরী তরুণীদের পাঠাতেন মনোরঞ্জন করে কোন কাজ বাগিয়ে নিতে। অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন নারীদের। রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ছিল ওপেন সিক্রেট।

আরও পড়ুন: পাপিয়ার বাসা থেকে অস্ত্র-মাদক উদ্ধার

দিনের পর দিন অনৈতিক এসব কর্মকান্ডে রীতিমতো আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছিলেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় তাকেসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)।

এরপর থেকেই পাপিয়ার উত্থানের অজানা অনেক রহস্য বেরিয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলাবলি হচ্ছে, হাইব্রিড পাপিয়ার রাজনীতিতে মূল শেল্টার ছিলেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু।

আরও পড়ুন: পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার

কেন্দ্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ওই সংসদ সদস্যই। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে তাদের নাম ভাঙিয়ে আরও নানা অপকর্ম শুরু করেন পাপিয়া। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেত্রীর সঙ্গেও দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল পাপিয়ার। ফলে সবাইকে ‘ডেম কেয়ার’ করতেন। এসব নিয়ে গোটা নরসিংদীতে এখন চরম সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এসব বিষয়াদির সত্যতা মেলে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুইয়ার কথাতেও। দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিককে পাপিয়া ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নিজ সংগঠনের সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন।

আরও পড়ুন: ওয়েস্টিনে তিন মাসে ৩ কোটি টাকা বিল দিয়েছেন সেই পাপিয়া!

সেখানে তিনি বলেছেন, ‘অনেক দিন ধরেই পাপিয়া নানা অপকর্মে জড়িত। এলাকার এক এমপি তাকে হঠাৎ যুবলীগে ভিড়িয়েছেন। এর দায় তাকেই নিতে হবে।’ বিষয়টি খোলাসা করতেই কালের আলো রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে তার সঙ্গে।

এবারও কারও নাম সরাসরি না বলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূইয়া কালের আলোকে বলেন, ‘পাপিয়ার সঙ্গে কোন সংসদ সদস্যের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তা দেখলেই টের পাবেন। ওই সংসদ সদস্যই কেন্দ্রীয় নেতাদের পাপিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কালের আলো। তবে ফোনে তার নাগাল মেলেনি।

সূত্র জানায়, পাপিয়ার শেল্টারদাতা এই সংসদ সদস্যের সঙ্গে পাপিয়ার বিভিন্ন সময়ের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর রীতিমতো দলীয় পরিমন্ডলেও তুলাধুনা হচ্ছেন ওই সংসদ সদস্য। কেন এবং কী কারণে তিনি অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত পাপিয়াকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন এ নিয়েও নানা প্রশ্নের ডালপালা বিস্তার করছে। আবার গণমাধ্যমকে তিনি এড়িয়ে চলাতেও সন্দেহের মাত্রা তীব্র হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘আটক পপিয়ার তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি গাড়ির শো রুম এবং নরসিংদীতে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। এসব ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।

‘পাপিয়া সমাজ সেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতেন। এজন্য অধিকাংশ সময় নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে অনৈতিক কাজে নারী সরবরাহ করে আসছিলেন তিনি।’

লে. কর্নেল বুলবুল বলেন, পাপিয়া গত তিন মাসে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হোটেল বিল পরিশোধ করেছেন। তার নামে ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সবসময় বুকড থাকতো। হোটেলে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারের খরচবাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন। হোটেলটিতে তার নিয়ন্ত্রণে সাতটি মেয়ের কথা জানা গেছে। যাদের প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন তিনি।’

পরে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ থেকে। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে আজীবন বহিস্কার করা হলো।

কালের আলো/বিএমএ/এনআর

Print Friendly, PDF & Email