খালেদাকে নিয়ে কথা বলার সময় নেই আ.লীগের

প্রকাশিতঃ 4:16 pm | February 19, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। এ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। অনেক কাজ রয়েছে। দেশের কাজ, দলের কাজ। একজন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বারবার প্রশ্নের জবাব দেব, সেই সময় আমাদের নেই। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।’

বুধবার(১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের এক যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। দলের ঢাকা বিভাগের অধীন সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে এ সভা হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি আদালতে আছেন। আদালতই সব ঠিক করবেন। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়, এটা দুর্নীতির মামলা। আদালত যেটা সিদ্ধান্ত নেয়ার নেবেন। এটা আওয়াম লীগের হাতে, শেখ হাসিনার হাতে বা আমাদের কারও এখতিয়ারে নেই। কাজেই বারবার প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না। আমি বারবার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না।

করোনাভাইরাসে দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না এবং এ বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি যদি কোনো ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোনো কারণে মন্দা দেখা দেয়; তার প্রভাব সারা বিশ্বেই থাকে। করোনাভাইরাস আমাদের অর্থনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সে অবস্থা এখনো আসেনি। এটা যদি বেশি দিন থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’

করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে হলে পদ্মা সেতুর কাজে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে আড়াইশ চীনের কর্মী, শ্রমিক স্বদেশে ছুটিতে গেছেন নববর্ষে। তারা এখনো আসেননি। করোনাভাইরাসের যে প্রতিক্রিয়া, এরপরও তিনটি স্প্যান আমাদের বসে গেছে। আগামীকালও একটি স্প্যান বসার কথা।’

‘যারা ছুটির কারণে চীনে আছেন আগামী আড়াই মাসের মধ্যে তারা ফিরে না এলে একটু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী দুই মাসের কাজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মোট ২৯টি সম্মেলন করেছি। এর মধ্যে দুটি ঢাকা সিটির। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত কোনো সম্মেলন হয়নি। শেখ হাসিনার বড় নির্দেশনা হচ্ছে দলকে সাজাতে হবে। সাংগঠনিকভাবে সৃশৃঙ্খল এবং সংগঠনকে সময়ের চাহিদা মেটানো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা টের পাচ্ছেন না।’

‘অনেক জায়গায় দেখা যায়, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে আছে। ৮-১০ বছর হয়ে গেছে আর কেউ নেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আবার অনেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিচ্ছে অনুমোদন পেতে পেতে ছয় মাস। সম্মেলন করতে বললে বলেন, আমাদের তো মেয়াদ শেষ হয়নি। সম্মেলন যেদিন থেকে হবে ক্ষণ গণনা সেদিন থেকে হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন থেকে শিক্ষা নেন।’

তিনি বলেন, ‘কমিটি করতে গিয়ে নিজের লোক পকেটে ঢুকাবেন না। এতে দলের কোনো লাভ হবে না। দল ভারী করার জন্য আজকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের আনবেন না। এপ্রিল থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ঢেলে সাজাবেন। এরপর জেলাগুলোর সম্মেলন হবে। ঘরে বসে কমিটি করবেন না- এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এতে দল শেষ হয়ে যাবে। সম্মেলন ছাড়া কোনো কমিটি করা যাবে না।’

‘অনেক সময় জেলার নেতারা উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এটা হবে না। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। কমিটি ভাঙতে হলে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করবেন। নেত্রী পর্যন্ত বিষয়টি গড়াবে। সেখানেই ফাইনাল সিদ্ধান্ত হবে যে, এ কমিটি ভাঙার জন্য আপনার সুপারিশ যথাযথ কি না? কোনো কারণে আপনার সাথে বনিবনা হলো না যে কাউকে বহিষ্কার করে দিলেন। এভাবে বহিষ্কার করা যাবে না। কমিটি নিয়ে বসতে হবে। কমিটির কাছে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু সরাসরি বহিষ্কার করতে পারবেন না।’

নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন সুসময়, কিন্তু দুঃসময় আসবে না; এটা কখনও ভাববেন না। কেউ কারও থাকবে না। আজকে নিজের মনে করে একজনকে নেতা বানাচ্ছেন। আপনার যখন খারাপ সময় আসবে আপনাকে সালামও দেবে না। কাজেই এসব নেতা বানিয়ে লাভ নেই।’

যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রহমান, মো. শাহজাহান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোহাম্মদ মন্নাফি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/বিএম/এনএল

Print Friendly, PDF & Email