ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 7:53 pm | February 16, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ভারত নারগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি যে মন্তব্য করেছেন তার জোরালো সমালোচনা করেছেন দেশটির খ্যাতনামা সাংবাদিক ও লেখক করণ থাপর।

ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে শনিবার এক বিশ্লেষণী নিবন্ধে অর্থনৈতিক, জীবনমান ও নারী অগ্রযাত্রাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকা তুলে ধরেছেন তিনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডির মন্তব্যকে বাংলাদেশ নিয়ে অজ্ঞতা বলেও অভিহিত করেছেন সিএনএন-আইবিএন ও ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে কাজ করা সাংবাদিক করণ থাপর।

সত্যি কথা বলতে আমি দায়ী করি। ১৯৭০ সালের দিকে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে যে ‘আন্তর্জাতিক তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন সে বিষয়ের অবতাড়না করে বিশ্লেষণে করণ থাপর বলেন, ‘সন্দেহ নেই, ওই সময় দেশটি তা ছিল। টেলিভিশনে প্রচারিত ধারাবাহিক ফুটেজে বারবার ভয়াবহ বন্যায় দেশটির এই চরিত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে কিসিঞ্জারের ওই বর্ণনা টিকে যায়।’

‘কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। দেশটির বিষয়ে বিশ্বের অভিমত পাল্টাচ্ছে।…কিন্তু ভারতে আমাদের ১৯৭০-এর দশকে আটকে থাকার কোনও মানে হয় না। তারপরও গত সপ্তাহে ভারতের এক প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে সেটাই স্পষ্ট হয়।’

‘স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি বলেছেন, ভারত যদি নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয় তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে। নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে অর্ধেক বাংলাদেশি ভারতে চলে আসবে।’

এমন বক্তব্যকে অজ্ঞতা হিসেবে চিহ্নিত করে করণ থাপর লিখেছেন, ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কথা বাদ দিলেও বাংলাদেশের সত্যিকার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। আরও খারাপ হলো, তিনি জানেন না ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে, বিশেষ করে জীবনযাপনের মানের ক্ষেত্রে।’

বিশ্লেষণে তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি, চীনা বিনিয়োগ, লন্ডন ও নিউ ইয়র্কের দোকানগুলো বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে ভরে যাওয়াসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।

তিনি লিখেছেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০১৯ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে। আর ভারতের কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

করণ থাপর লিখেছেন, ‘স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের জীবনযাপন অনেক বেশি আকর্ষণীয় বলেই দৃশ্যমান। তথ্যের দিকে নজর দিয়ে দেখুন। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর। ভারতে হলো ৬৭ ও ৭০ বছর। এই বড় বিষয়টির দিকে যখন তাকাবেন তখন পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

এছাড়া নবজাতক ও শিশু মৃত্যু হারের বিষয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারীদের অংশগ্রহণ, উচ্চবিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের ভর্তির অনুপাত, নারীদের স্বাক্ষরতাসহ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘সীমান্তের ওপারের অবস্থা শুধু যে ভালো তা নয়, তারা আরও ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাই পিছিয়ে পড়ছি।’

করণ থাপরের তুলে দেয়া তথ্যমতে, ভারতের নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২২ দশকি ৭৩ শতাংশ; বাংলাদেশে তা ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ। ভারতে শিশু মৃত্যু হার ২৯ দশমিক ৯৪, যা বাংলাদেশে ২৫ দশমিক ১৪। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ভারতের ৩৮ দশমিক ৬৯ এবং বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশী নারীদের ৭১ শতাংশ স্বাক্ষর। ভারতে তা ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে শ্রমে নারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ যা আরও বাড়ছে। আর এই হার ২৩ শতাংশ এবং গত এক দশকে তা কমেছে ৮ শতাংশ। এছাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের ভর্তির সূচকে ভারতের অনুপাত শূন্য দশমিক ৯৪ যা বাংলাদেশে ১ দশমিক ১৪।

অর্থনৈতিক কারণে কিছু ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য টেনে করণ লিখেছেন, ‘তিনি হয়তো সঠিক কথাই বলেছেন। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় নিজেদের জীবনমানের উন্নতি করতে এবং বাংলাদেশের জীবনযাপন নিশ্চিতভাবেই আরও ভালো বলে প্রতীয়মান হচ্ছ।

‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার মতো প্রবণতা খুব বেশি নেই। যে পরিসংখ্যান আমি উদ্ধৃত করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে কীট হওয়া বেশি আকর্ষণীয়।’

যুক্তরাষ্ট্র যদি এই মুহুর্তে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অর্ধেক ভারত খালি হয়ে যাবে বলেও নিজ দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রেড্ডিকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

কালের আলো/এনএল/পিএম

Print Friendly, PDF & Email