কালো টাকার দাপট আহমাদ আলীর, অস্ত্রের ভয় দেখানো হচ্ছে ভোটারদের

প্রকাশিতঃ 4:50 pm | January 26, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

আর মাত্র ৫ দিন পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন। এখনও শেষদিকের প্রচারণায় প্রার্থীদের দূয়ারে দূয়ারে ছুটছেন প্রার্থীরা। তবে অন্য প্রার্থীদের মতো সেই পথে না হেঁটে কালো টাকার দাপট দেখাতে শুরু করেছেন বিএনপি মনোনীত একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। তার নাম এসএম আহমাদ আলী(টিফিন ক্যারিয়ার)।

একাধিক বস্তির গরিব ভোটারদের টার্গেট করে তিনি টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের এনে ডিনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের হুমকি-ধমকি ও অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছেন।

এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ-আতঙ্ক। যদিও নির্বাচনে যেন কোনভাবেই কালো টাকার লেনদেন না হয় এই বিষয়ে নিজেদের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দলীয় ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী আসিফ আহমাদ সঙ্গে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে করিৎকর্মা এই প্রার্থী ভোট কেনাবেচায় বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে মাঠে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যেই ছক কষে তিনি ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভোট কেনার দরদাম ঠিকঠাক করেছেন।

আবার বস্তির নেতাদের ‘মাছ-মাংস’ বাজার করে দিয়ে তাদের ‘হাত’ করছেন। এসব কাজে ব্যবহার করছেন নিজস্ব একটি ক্যাডার বাহিনী। ঢাকার বাইরে থেকে আসা এই ক্যাডার বাহিনী সন্ধ্যার পর পরই ঢুঁ দিচ্ছেন দরিদ্র ও বস্তিবাসীদের দূয়ারে।

মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে এই ওয়ার্ডে হারিয়ে দিতে বাতাসে কালো টাকা উড়িয়ে সব বন্দোবস্ত ‘পাক্কা’ করে রেখেছেন বিএনপি’র প্রার্থী।

যদিও বিএনপির এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী মামলা রয়েছে। কিন্তু ভোট দূয়ারে কড়া নাড়ায় বহু সন্ত্রাসী মামলার এই আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন, এমন দাবি সূত্রের।

তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি প্রার্থী এসএম আহমাদ আলীর ভোট কেনাবেচার এসব কূটকৌশল সনাক্ত করেতে পেরেছে। ভোট গ্রহণের আগে ‘চাঁদরাতে’ ব্যাপকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গরিব, পোশাক শ্রমিক ও বস্তির বাসিন্দাদের মাঝে কয়েক কোটি টাকা ছড়িয়ে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তারেকুজ্জামান রাজীব। কিন্তু এই ওয়ার্ডে কাঙ্খিত উন্নয়ন উপহার না দিয়ে নিজের আখের গুছানোর কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। সন্ত্রাস, অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থেকে কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। অবশেষে কারাগারে ঠাঁই হয়েছে কথিত জনতার কাউন্সিলরের।

এমন প্রেক্ষাপটে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির উদীয়মান তরুণ আসিফ আহমাদ দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। আপাদমস্তক আওয়ামী লীগ পরিবারের এই সন্তানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পেয়ে শুরু থেকেই উজ্জীবিত দলটির নেতা-কর্মীরা।

সব মান-অভিমান ভুলে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও দলের প্রার্থী আসিফকে বিজয়ী করতে পূর্ণোদ্যমে মাঠে রয়েছেন। আসিফও দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ডের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সমান গতিতে বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম আহমাদ আলীর তেমন প্রচারণা চোখে পড়েনি। ঠিকাদার হওয়ায় তার অর্থবিত্তও ব্যাপক।

সূত্র জানায়, ‘ডোর টু ডোর’ ক্যাম্পেইনে আস্থা নেই বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম আহমাদ আলীর। পরিশ্রমের পথে না হেঁটে তিনি অবৈধ টাকার জোরে ‘শর্টকার্ট’ পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। স্থানীয় বসিলা, কাটাশুরসহ বেশ কয়েকটি বস্তির গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষজনের ভোট টাকায় কেনার ফন্দিফিকির এঁটেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গরিব বস্তিবাসীর দূয়ারে হানা দিচ্ছেন বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। দরিদ্র মানুষের এসব বস্তিগুলোকে ঘিরে রাত যত গভীর হয় ততই বেড়ে যেতে থাকে অপরিচিত ও সন্দেহজনক লোকজনের আনাগোনা।

এই প্রার্থী ইতোমধ্যেই ভোটের বাজারে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে কালো টাকা বিলি বন্টন শুরু করে দিয়েছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসিফ আহমাদ তুমুল গতিতে প্রচারণা চালিয়ে আসলেও মূলত নির্বাচনের আগের কয়েকটি দিনের অপেক্ষায় ছিলেন বিএনপি’র প্রার্থী। নিজের ‘ভোটের বাজার’ পর্যবেক্ষণ করে এখন টাকায় ভোটারদের ভোট কেনার দিকে নজর দিয়েছেন। নিয়োগ দিয়েছেন পেশাদার ক্যাডার বাহিনীও।

বসিলা এলাকার একটি বস্তির একাধিক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অপরিচিত লোকজন রাতে বস্তিতে আসছেন। তাদের ভাষ্য এমন- ‘টাকা নাও, ভোট দাও।’ যাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে তাদের নাম-পরিচয় লেখা হচ্ছে। টাকা নিয়ে ভোট না দিলে অস্ত্র হাতে তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।  

ভোট কেনাবেচাকে বড় অপরাধ বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাবমুক্ত করতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নজরদারির মাধ্যমেই এটি রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ভোটারদের এই বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা উচিত।’

কালের আলো/সিএইচ/আরআর

Print Friendly, PDF & Email