যেসব কারণে আতিকুলের চেয়ে ‘ব্যাকফুটে’ তাবিথ!

প্রকাশিতঃ 8:49 pm | January 16, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

রীতিমতো উত্তাপ বাড়ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের প্রচারের মাঠে। সমানতালে দুই প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আউয়াল প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বারবার নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তত্ত্ব দিচ্ছেন বিএনপি’র প্রার্থী তাবিথ।

আরও পড়ুন: তাবিথ ব্যস্ত নালিশে; গান গেয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ভোট রণে আতিকুল (ভিডিও)

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেই অব্যাহত অভিযোগ করে যাচ্ছেন। কখনও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার আবার কখনও হামলার; মাইক কেড়ে নেওয়ার। কিন্তু মার্জিত বাক্যালাপে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন আতিকুল ইসলাম। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিজের ‘ভাতিজা’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিদ্বন্দ্বীর যেন মন ভরছে না।

ফলে পোস্টার নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতির পথে না হেঁটে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তাবিথ আউয়ালের পোস্টার লাগিয়ে দেওয়ার। দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, ‘আমি বা আমাদের নেতারা যদি বলতো পোস্টার ছিঁড়তে, তাহলে তাবিথ আউয়ালের একটি পোস্টারও থাকতো না। আপনার (তাবিথ আউয়াল) পোস্টার দিন, লাগিয়ে দেবো। একটা পোস্টারও কেউ ছিঁড়বে না।’

আরও পড়ুন: আতিকুল বানান ‘চা’; তাবিথ দেন মুয়াজ্জিনকে ‘ধাক্কা’!

ভোট পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভোট রণে প্রতিপক্ষের প্রতি আতিকুল ইসলাম যে ঔদার্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন সেটি রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। আর এই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেই তাবিথকে ধরাশায়ী করেছেন তিনি। নিজেও বেশ সতর্ক মন্তব্য করেই এগোচ্ছেন।

কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করে আপন গতিতে তিনি ভোটের মাঠে ছুটছেন। সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা যেমন বলছেন তেমনি সবাইকে ভোটের মাঠে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

সমালোচকরা বলছেন, ভোটের মাঠে আতিকুল বেশ চাপের মুখে আছেন। তবে তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, প্রতিদিনই আতিকুল যেভাবে ভোটের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেটি তাঁর ফুরফুরে মেজাজেরই ইঙ্গিত বহন করে। কখনও নিজে চা বানিয়ে কর্মী ভোটারদের পান করাচ্ছেন।

কখনও গলা ছেড়ে গান গাইছেন আবার ক্রিকেট খেলাতেও মেতে উঠছেন। সাধারণ হোটেলে গিয়ে কর্মীদের নিয়ে দুপুরের আহার সারছেন। কোন প্রার্থী যদি চাপের মুখে থাকতেন তাহলে এভাবে হেসে-খেলে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ‘গোল’ দিতে পারতেন না।

ভোটের মাঠে আতিকুল ইসলাম নির্ভার; দুশ্চিন্তামুক্ত। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁর জন্য ঐক্যবদ্ধ। তারকারাও তাঁর পক্ষে প্রচারণায় সামিল হয়েছেন। নিজেকে ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম না ভেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তিনি ‘আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম।’

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাবিথের প্রচারণায় বিএনপি’র অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে ইতোমধ্যে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবেই তাঁর পক্ষে প্রচারণাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কোমর বেঁধে তাঁর জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।

ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কখনও কেউ হারাতে পারে না এই কথাটি যেমন সত্য তেমনি আতিকুলের পক্ষে একীভূত নেতা-কর্মীদের আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটে বিজয় সুনিশ্চিত।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিজ্ঞতার হিসাবেও প্রতিপক্ষ তাবিথ আউয়ালের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আতিকুল। তিনি উপ-নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে ৯ মাস উত্তরের ‘নগর সেবক’ ছিলেন। এক মুহুর্তও ঘরে বসে না থেকে দিন-রাত একাকার করে কাজ করেছেন।

অন্যদিকে, তাবিথ অভিজ্ঞতার দিক থেকে আনকোড়া। পাশাপাশি দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে নিজের পক্ষে সব ব্যবসায়ী নেতাদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন আতিকুল ইসলাম। গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকার ভোটের ফলাফল নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এসব সমীকরণ তাবিথকে ভোটের মাঠে ‘ব্যাকফুটে’ ঠেলে দিচ্ছে।

নিজের নির্বাচনী প্রতিটি প্রচারণায় আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দীর্ঘ নয় মাস আমি কঠিন অনুশীলন করেছি। এর মাঝে বেশকিছু উন্নয়নও হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, আগারগাঁওয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের চেয়েও বড় সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।

১০ কিলোমিটার সড়ক সাইকেল চলার উপযোগী করা হয়েছে। এই সড়কে সবাই বিনোদনের জন্য আসতে পারবেন। বসার ব্যবস্থা থাকবে, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মোহাম্মদপুরে ৭টি পার্ককে আধুনিকায়ন করেছি। কিছু খালি জায়গা তবে ছোট; সেগুলো বড় মাঠ বা পার্ক করা যাবে না।

তাই সেগুলোকে শুধু শিশুপার্ক করার জন্য কাজ শুরু করেছি। আমাদের সব উন্নয়ন ঠিকমতো হবে যদি যুব সমাজ মাদকমুক্ত থাকে। এজন্য তাদের বিনোদন এবং খেলার মধ্যে রাখতে হবে।’

কালের আলো/আরআইএ/এমএইচ

Print Friendly, PDF & Email