সব সেনানিবাসে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা : বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঐতিহাসিক মুহুর্তের স্বাক্ষী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও

প্রকাশিতঃ 7:02 pm | January 11, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বছরের ৩৬৫ দিন থেকে দিনটি ব্যতিক্রম। যেন রূপকথার মতোন একদিন। অনুপ্রাণিত হওয়ার দিনটিতে নতুন সাজে সেজেছিল দেশের প্রতিটি সেনানিবাসও।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন ৪৮ বছর পর, অশ্রু দুই বঙ্গকন্যার চোখে

বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনা আয়োজন।

অনিন্দ্য সুন্দর বিকেলে ঐতিহাসিক এক মুহুর্তের স্বাক্ষী হয়ে থাকলেন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যরা। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ল্যাপটপের বাটনে ক্লিক করে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

তখন দেশের প্রতিটি সেনানিবাসেই সমমর্যাদায় উদযাপন করা হয় মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান। সবাই যেন ফিরে গেলেন ৪৮ বছরের আগের অবিস্মরণীয় দিনটিতে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমান তেজগাঁও বিমানবন্দরের মাটি যখন স্পর্শ করেছিল তখন সেখানে সৃষ্টি হয়েছিল জনসমুদ্র। আওয়াজ উঠেছিল আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে-‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, জেলের তালা ভেঙেছি শেখ মুজিবকে এনেছি।’

রীতিমতো এক সমুদ্রের গর্জন! তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের মতোই প্রতিটি সেনানিবাসেই সেনা সদস্য থেকে শুরু করে কোমলমতি শিক্ষার্থী সাহসে, সংগ্রামে, সহনশীলতায় জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত-অনুপ্রাণিত হওয়ার দৃপ্ত শপথই নিলেন আরও একবার।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মন্ত্রে উজ্জীবিত ঐক্যের বন্ধনে জাগ্রত মানুষজন মহান রাজনীতিকের জীবন থেকে পাঠ নিয়ে তাঁরই জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় জীবনের অগ্রগতি ধরে রাখার অঙ্গীকারই করলেন প্রকারান্তরে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দিক নির্দেশনায় দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে অনুভবের বছরে, স্মরণ ও ফিরে দেখার সময়ে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ-উষ্ণতায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ক্ষণটি উদযাপন করলেন বর্ণাঢ্য আয়োজনে, উৎসবমুখর পরিবেশে।

প্রতীকী আয়োজনে অনন্য এক বিকেল

ইতিহাসের মহানায়ককে বহনকারী ব্রিটিশ রাজকীয় সি-১৩০ জে মডেলের একটি বিমান এসে দাঁড়ালো তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়েতে। আলোর পথযাত্রী হয়ে আলোর রেখায় তিনি ফিরে এলেন। দরজায় আলোর অবয়বে চিরচেনা সেই হাসি বঙ্গবন্ধুর মুখে! লালগালিচা বেয়ে সবুজ আলোর অবয়বে জনতার শেখ মুজিব নেমে এলেন নিজের মাতৃভূমির মাটিতে।

শুরু হলো পুষ্পবৃষ্টি। সেই আলোর রেখা ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে লালগালিচার মাথায় ছোট্ট মঞ্চে এসে থামলো। গার্ড অব অনার দিলো সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অবিস্মরণীয় মুহুর্তের এমন প্রতীকী মঞ্চায়ন দেখা গেলো ৪৮ বছর পর।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো। আবেগ আপ্লুত হয়ে বারবার চোখ মুছলেন জাতির পিতার দুই রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

আবেগঘন মুহুর্তের রেশ কাটতে না কাটতেই ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সঙ্গে নিয়ে বক্তব্যের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী।

নিজের বক্তব্য শেষ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ল্যাপটপের বাটনে ক্লিক করে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনার উদ্বোধন ঘোষণা করলেন। এটি ছিল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের দৃশ্য। এর বাইরে গোটা দেশের চিত্রও ছিল অভিন্নই।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আবহের সঙ্গে মিল রেখেই ঐতিহাসিক এই মাহেন্দ্রক্ষণের স্বাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে দেশের সব সেনানিবাসে স্বতন্ত্র ডিজাইনের কাউন্টডাউন ক্লক স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ক্ষণগণনার সুইচ চাপার সাথে সাথে প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে ক্ষণগণনার ঘড়ির সুইচ চেপে এবং কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

সমমর্যাদায় উদযাপন করা হয় মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নির্দেশে দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে প্রতিটি সেনানিবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসার জেসিও এনসিও সৈনিকরা, সেখানকার সেনানিবাসে অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি, ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে নয়নাভিরাম রূপে সাজানো হয়। টেলিভিশনে ক্ষণগণনার সরাসরি অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানো হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এম.শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নির্দেশে দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালন করতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গর্বিত।’

ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে এরিয়া কমান্ডার এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার এই অনুষ্ঠান দেশের সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত এবং নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করেছে। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনার জন্য মাননীয় সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email