বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন ৪৮ বছর পর, অশ্রু দুই বঙ্গকন্যার চোখে

প্রকাশিতঃ 8:34 pm | January 10, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

১০ জানুয়ারি। ইতিহাসের পাতায় অনন্য স্মরণীয় একদিন। স্মরণীয় এই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হলো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ উদযাপনের ক্ষণ গণনা শুরুর মুহুর্ত হিসেবে। শ্রেষ্ঠ গৌরবের এই মুহুর্তে আবারও ফিরে এলেন ইতিহাসের মহানায়ক।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আবহের সৃষ্টি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ১৩০-জে উড়োজাহাজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিমান থেকে আলোক প্রক্ষেপণ করা হলো। সঙ্গে সঙ্গেই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে ২১ বার তোপধ্বনি, প্রতীকী অভ্যর্থনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হলো।

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ফুল ছিটিয়ে আর সবাই ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখর করে তুললেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে তেজগাঁয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রতীকী বিমান অবতরণের পর লেজার রশ্মির প্রতীকী আলোকবর্তিকা রূপে ফিরে এলেন হাজার বছরের ধন্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আরও পড়ুনঃ মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

পিতা মুজিবের প্রতীকী অবতরণে কাঁদলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চোখ মুছছিলেন বারবার। পাশেই বসে থাকা জাতির জনকের আরেক কন্যা শেখ রেহানাও কেঁদেছেন। দুই কন্যার আবেগী মুহুর্ত ভারাক্রান্ত করে তুলে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অন্যদেরকেও।

যেভাবে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিমানে এসেছিলেন সেই রকমভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সম্প্রতি সংযোজিত যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ জে বিমান বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে অবতরণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক মুহুর্তকে পুনরাবৃত্তি করা হয়।

ক্ষণগণনার জন্য তেজগাঁও বিমান বন্দর এলাকায় একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড এর মাধ্যমে অনুরূপ ঘড়ি দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য স্থানে একযোগে দৃশ্যমান রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সকল ঘড়ির ডিজিট মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। চলতি বছরের আগামী ১৭ মার্চ মধ্যরাতে সকল ঘড়ির ডিজিট শুন্য হয়ে যাবে।

আয়োজিত ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে প্যারেড স্কোয়ারের উপযুক্ত স্থানে বড় এলইডি স্ক্রীনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় ধারনকৃত ঐতিহাসিক মুহুর্তের ভিডিও এবং স্থিরচিত্রসমূহ প্রদর্শন করা হয়। বিমানটি অবতরণের পর ট্যাক্সি করে টারমাক এলাকায় পৌঁছানো শেষে বিমানের দরজা খোলার সাথে সাথে ২১ বার তোপধ্বনি প্রদান করা হয়।

বিমানটি টারমাকে থামার নির্দিষ্ট স্থানে সিঁড়ি ও ফ্লোরে লাল গালিচায় সাজানো হয়। বিমানের দরজা খোলা হলে লেজার লাইটের মাধ্যমে দরজার কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আলোকিত করা হয় এবং সে আলো সিঁড়ি থেকে আস্তে আস্তে লাল গালিচার মাথায় এসে থেমে যায়। যা বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন তাঁরই প্রতিফলন হয়। লেজার আলো দৃশ্যমান হওয়া মাত্র উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুলের পাপড়ি বর্ণিত আলোর বর্তিকার উপর ছড়িয়ে দেয়। এরপরই সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীতের বাদ্য। প্রধানমন্ত্রী সুইচ চাপার সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও বিমান বন্দরে স্থাপিত ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড এ ক্ষণগণনা শুরু হয় এবং প্রচুর সংখ্যক কবুতর অবমুক্ত করা হয় ও বেলুন উড়ানো হয়। একই সঙ্গে দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ক্ষণগণনা শুরু হয়।

আবেগঘন মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা
আনুষ্ঠানিকভাবেই লোগো উন্মোচন, ঘড়ি চালুর মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও সদস্য সচিব কামাল নাসের প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন। কাউন্টডাউন ঘোষণাকালে দেওয়া বক্তব্যের সময়ও বারবার অতীত স্মৃতিচারণ করে অশ্রুসজল হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখ। ক্ষণগণনার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দৃষ্টি কাড়ে সবার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন অর্থাৎ প্রতি বছরের ১০ জানুয়ারি উদযাপন করে বাঙালি জাতি। কিন্তু এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী উদযাপনে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর সেই প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়।

এ সময় ১৬ কোটি বাংলাদেশীর চোখ ছিল টিভি পর্দায়। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ সবার মাঝের আবেগঘন মুহুর্ত। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিতে সেদিন দেশের মাটিতে পা রেখে কেঁদেছিলেন জাতির পিতাও। চোখ মুছার সাদাকালো সেই ছবি এখনও বাঙালি জাতির জন্য সীমাহীন আবেগ-প্রেরণার।

‘বাংলার মাটিতে এসে বঙ্গবন্ধু আমাদের কথা ভাবেননি’
মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন। এই দিনেই তার জন্মশতবাষির্কী উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি। যে দিনে তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন, সে দিনই তার জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি।’

স্মৃতিচারণ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে এসে কিন্তু আমাদের কথা ভাবেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে, তার প্রিয় জনগণের কাছে। তারপরে আমরা তাকে পাই। তিনি এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। চেয়েছিলেন এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।

যে বিজয়ের আলোকবর্তীকা তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সে মশাল নিয়ে আমরা আগামী দিনে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে সম্মানের সঙ্গে চলবে বাংলাদেশ।’

যেভাবে আসন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী
বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছেন।

এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড.কামাল আবু নাসেরসহ উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ তাদের স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে এক কাতারে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ডিজি মেজর জেনারেল মজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাহফুজুর রহমান, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এম.শফিউদ্দিন আহমেদ, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক, চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিকুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম প্রমুখ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান বি চৌধুরী-কামাল ও কাদের সিদ্দিকী
এই অনুষ্ঠানে এবার মঞ্চে দেখা যায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email