জার্নালিজমকে আগে ভালোবাসেন, তারপর এই পেশায় আসেন

প্রকাশিতঃ 10:47 pm | January 06, 2020

বাণী ইয়াসমিন হাসি :

৩১ ডিসেম্বর জাদুঘরে আমাদের একটা অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শুরুর মিনিট বিশেকের মধ্যেই একজন এসে বললো আমি অমুক পত্রিকায় কাজ করি। এই নেন আমার কার্ড।আমাকে প্রেসরিলিজ টা মেইল কইরেন। সেই শুরু তারপর একে একে অনেকেই এলেন।

প্রথমজন দেশের প্রথমসারির জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টার। রাতে অনেকটা কৌতুহলবশত আবার কিছুটা খোঁচা দেওয়ার লোভে ঐ হাউজের সিনিয়রকে কল দিলাম(যাকে রিপোর্টার পাঠাতে অনুরোধ করেছিলাম)। সালাম ভাইজান। থ্যাংক ইউ। আপনার রিপোর্টার আসছিলো। কিন্তু ভাইজান একখান প্রশ্ন-একই সময়ে দুইটা এ্যাসাইমেন্ট দিয়ে রিপোর্টার পাঠাইলেন! কি কও তুমি! আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা। তোমার প্রোগ্রামে আমি ভ্যাজাইল্লা রিপোর্টার পাঠাবো!

এ্যাসাইমেন্টে যেয়ে কোনরকম চেহারা দেখিয়ে বাইরে যেয়ে হাওয়া খেয়ে অফিসে বসে প্রেসরিলিজ দেখে নিউজ করাই নাকি এখনকার ট্রেন্ড!

কিছুদিন আগে সিরডাপে একটা গোলটেবিল ছিল আমাদের সংগঠনের। অনলাইনসহ ৩৭ টা জাতীয় দৈনিকে সেই প্রোগ্রামের খবর ছাপা হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো- সবগুলো নিউজের ছবি, হেডলাইন, ইন্ট্রো হুবহু এক। এমনকি প্রেসরিলিজে যে দুইটা টাইপো ছিল সেটাও কমন সবগুলো নিউজে!

বিবার্তাও প্রতিদিন অনেক নিউজ কপি করে। বিবার্তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমার কোন হস্তক্ষেপ থাকে না। রিপোর্টার হলে মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর সাবএডিটর হলে পিসিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। দিন সাতেক ট্রায়ালের পর আমার রুমে সিভিসহ সিনিয়র আসে। সিনিয়রকে আমি দুইটা প্রশ্ন করি- জার্নালিজম ভালোবাসে? কাজ একটু কম জানুক তাতে সমস্যা নেই কিন্তু শেখার আগ্রহ আছে কিনা? আমার এই প্রশ্ন দুইটার উত্তর হ্যাঁ হলে নিয়োগ কনফার্ম।

বিবার্তার বয়স ৮ বছর। এই ৮ বছরে এখান থেকে ‌অনেক সাংবাদিক বের হয়েছে যারা দেশের নামকরা হাউজগুলোতে দাপটের সাথে কাজ করছে।

জার্নালিজমকে আগে ভালোবাসেন তারপর এই পেশায় আসেন। পাশাপাশি হাউজের বড়কর্তাদেরও মাথায় রাখা উচিত-শুধু একটা প্রেসকার্ড আর বুম হাতে ধরিয়ে মাঠে ছেড়ে না দিয়ে সাংবাদিকতার বেসিক জিনিসগুলো শিখিয়ে পড়িয়ে কাজে পাঠানো।

ইনডিপেনডেন্ট টিভির রিপোর্টারের অপেশাদার আচরণের জন্য আমি সাংবাদিক হিসেবে লজ্জিত।

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা

Print Friendly, PDF & Email