কোন হিসাব-নিকাশে মেয়র আতিকুল ইসলামই উত্তরে নৌকার মাঝি?

প্রকাশিতঃ 8:00 pm | December 27, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ক্লিন ইমেজের সঙ্গে জনপ্রিয়তা। এই মাপকাঠিতে এবারও ঢাকার দুই সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন নামের ‘সোনার হরিণ’ পেতে অনেকেই দাপাদাপি বা লম্ফঝম্ফ করছেন। সুন্দর-সুশৃঙ্খল ঢাকা উপহার দেওয়ার কথা মুখে বললেও নিজেরাই মনোনয়ন ফরম জমা দিতে এসে নগরীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন।

আরও পড়ুনঃ ‘অলরাউন্ডার’ নগর পিতা আতিকুল ইসলাম!

কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যেন উল্টো স্রোতেই গা ভাসিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। দলের প্রধান, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর আনুগত্যের পাশাপাশি বিশ্বাস-আস্থা ধরে রাখায় পারঙ্গম এ ‘নগর সেবক’ শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই সর্বোচ্চ নজর দিয়েছেন।

নানা হিসাব-নিকাশের সম্ভাব্য ফল বলছে, আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এখন অপেক্ষা কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার।

মেয়র হয়ে কেমন ছিলেন আতিকুল?
ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হয়ে গতানুগতিক ধারায় পথ চলেননি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে নগরবাসীর কল্যাণের প্রতিই অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছেন। নগরীর বাসিন্দাদের কাছে বারবার পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বরত্নের বার্তা। সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নতুন নতুন কনসেপ্ট ও দিক নির্দেশনা তাকে উজ্জীবিত করেছে। নগর পিতার চেয়ারে বসার পর দিন বা রাত বলে কথা নেই। প্রতিদিনই কাজ করেছেন; করার চেষ্টা করেছেন। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কঠোর হয়েছেন। নগরবাসীর আপদে-বিপদে, সংশয়-সংকটে তাদের কাছে ছুটে গেছেন; পাশে দাঁড়িয়েছেন।

আস্থা ও বিশ্বাসের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকেই ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। তাদের আশ্বস্ত করেছেন, ভরসা দিয়েছেন। পরিকল্পনা যেমন করেছেন তেমনি বাস্তবায়নেও তৎপর হয়েছেন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যুক্ত করেছেন প্রাণের নাগরিকদেরই।

হয়তো মাত্র এক বছর সময়েই ‘নন্দিত’ মেয়র হিসেবে নিজেকে অভিষিক্ত করতে পারেননি। কিন্তু জনসেবাকেই তিনি জীবনের লক্ষ্য করেছেন। নির্ভীক থেকেছেন কথনে, কর্মে।

‘নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি’, বঙ্গবন্ধু কন্যার এমন উচ্চারণ হৃদয়তন্ত্রিতে গেঁথে নগরবাসীর কল্যাণে নিবিষ্ট মনে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এমন নগর পিতাকেই যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সভাপতি পুনরায় বেছে নিচ্ছেন এ নিয়ে সন্দেহ বা সংশয় কোনটিই দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রধানমন্ত্রীর আপত্য স্নেহই মেয়র আতিকের শক্তি
মাত্র ৯ মাসে দিন-রাত একাকার করে কাজ করার চেষ্টা করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে তাকে ‘আমার মেয়র’ হিসেবে অভিহিত করে আতিকের প্রতি তাঁর আপত্য স্নেহের বিষয়টিই প্রকাশ করেছেন। মেয়র আতিকও বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আপত্য স্নেহই তাঁর চলার পথে শক্তি এবং অনুপ্রেরণা।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেয়র আতিকুলের মেশার প্রবণতা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে তার আন্তরিকতা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন রাজনীতিতে তাকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থান
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ডিএনসিসির নির্বাচনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীর যেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার প্রবণতা নেই সেখানে একজন ব্যক্তি হিসেবেও নগরবাসীর সঙ্গে মিশে তাদের কাছে জায়গা করে নিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এদিক থেকেও তিনি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।

বিএনপি’র সেই প্রার্থী ও তাঁর বাবাকে নিয়ে জনমনে যেখানে নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে সেখানে ভবিষ্যৎ স্বপ্নদৃষ্টি নিয়ে একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে বিনির্মাণ করেছেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতির ‘প্র্যাকটিস’ তাকে ভোট রাজনীতিতেও তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

একই সঙ্গে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতি নিজের ভালোবাসা-শ্রদ্ধা এবং তার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে গভীর মনোযোগ নগরবাসীর মাঝে তাকে বাড়তি গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে। এসব ব্যবচ্ছেদেও ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

মনোনয়নের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী মেয়র আতিকুল ইসলাম
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী মেয়র আতিকুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আরও ৫ বছর দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এক্ষেত্রে আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে নিজের ৯ মাসের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেছেন, ‘মেয়র হিসেবে দাযিত্ব পালনের প্রায় ৯ মাসের অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা’ গড়ে তুলতে পারবো।’

উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে ডিএনসিসির মেয়র হওয়া আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আমি দায়িত্ব নেওযার পর প্রতিদিন কাজ করেছি। এমন একটা দিন নেই যেদিন নগরের কাজে, নগরবাসীর প্রয়োজনে আমি ছিলাম না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল। আমি শতভাগ আশাবাদী এই দলের হয়ে মনোনয়ন পাবো।

কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email