সুখী-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই বাংলাদেশকে

প্রকাশিতঃ 10:42 am | April 26, 2018

:: অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ ::

বাঙালির গৌরবের বছর ১৯৭১। নিজের পরিচয়ে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এই জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রমাণ করেছিল, ‘এ জাতির মাথা নোয়াবার নয়’। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বপ্ন ছিল। একটি স্বপ্ন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশের মুক্তিকামী মানুষ। সেই লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ শিক্ষা, ক্রীড়া, তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ অনেক ক্ষেত্রেই অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মেঘনা ও যমুনা সেতু সহ অসংখ্য বড় সেতু নির্মিত হবার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন। কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা একটি দেশ ও জাতিকে স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল উপজীব্য হিসেবে যে কতো বড় কাজ করে পদ্মা সেতুই তার প্রমাণ।

১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এখন আমার সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে প্রকৃত জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজ গঠন করা’। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশ চলে যায় এক অনিশ্চয়তার পথে।

সবুজ অভয়ারণ্য, সুজলা-সুফলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অপূর্ব মিলনমেলা হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে বহু প্রাকৃতিক সম্পদ। সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মানব সম্পদ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। অপরূপ মায়াবী নজরকাড়া আমাদের দেশের বাইরে ও ভেতরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বহুবার এবং আজও বিভিন্নভাবে চলছে।

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে থাকবে না মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, থাকবে না সামাজিক কোন্দল, গুম-হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি। অপর দিকে থাকবে ধর্মীয় অনুঊতি, শিক্ষাঙ্গনে থাকবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, যেখানে থাকবে না অবৈধ স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের ঝনঝনানি। আগামীর বাংলাদেশ চাই অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি সাধন, যেখানে থাকবে না লুটতরাজ, সুদ-ঘুষ ও সীমাহীন দুর্নীতি। জাতি আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে থাকবে না জুলুম-নিপীড়ন। সকলে একে অন্যের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল হবে। স্বাধীন বাংলার মানুষ আরো দেখতে চায় শিল্প বিপ্লবের স্বর্ণালী যুগ, রফতানিমুখর দেশীয় পণ্য, চোরাচালানহীন সীমান্ত পথ, প্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদদের মতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে তরুণ জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে। বাংলাদেশের সামনেও সোনালি ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হবে কিনা তা নির্ভর করছে সৃষ্ট সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে তার ওপর। বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে সমস্যা হলো জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বেকার। যুব জনগোষ্ঠীর একটি অংশ অভিভাবকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যুবসমাজের কর্মসংস্থানের যথাযথ

পদক্ষেপ যেমন দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে তেমন এ ক্ষেত্রের ব্যর্থতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সোনালি ভবিষ্যতের স্বার্থেই কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতি আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

আসুন আর নয় বিভক্তি-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়তে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌত্বর প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভ‚মিকে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী ও আদর্শিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হই।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
e-mail: advahmed@outlook.com

Print Friendly, PDF & Email