৩০ লাখ শহীদের স্মরণে বিডি ক্লিনের চমক, প্রশংসায় মেয়র আতিক

প্রকাশিতঃ 8:41 pm | December 15, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:


একেতো বিজয়ের ৪৯ বছরে পা রাখছে বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিনটি অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম। বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার চিরস্মরণীয় দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বিডি ক্লিন।

আরও পড়ুন: নাগরিকের পছন্দের স্টাইলে মেয়র আতিক, নিজেই করছেন উচ্ছেদ অভিযান তদারকি! (ভিডিও)

২০২১ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে ‘এই শহর আমার, এই দেশ আমার, পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমার’ এ সচেতনতাবোধ সবার মাঝে জাগিয়ে তুলতে পরিবেশ দূষণকারী ৩০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে রিসাইকেল নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী করেছে ২০১৬ সালের ৩ জুন যাত্রা করা এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।

বরাবরের মতো তাদের এবারের সাড়া জাগানো কর্মসূচিতেও পাশে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বনানী বিটিসিএল (টিন্ডটি) মাঠে অভিনব এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এ মেয়র।

বিডি ক্লিন এর প্রধান সমন্বয়ক ফরিদ উদ্দিন কালের আলোকে জানান, সারাদেশে বিডি ক্লিনের ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী গত ১০ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ এ স্লোগান বুকে ধারণ করে সারাদেশ থেকে কুড়িয়ে ৩০ লক্ষ ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করেন।’

তিনি জানান, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের মাটিকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এসব বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতেই কুড়িয়ে পাওয়া ৩০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতেলের রিসাইকেল নিশ্চিত করা হবে।

আয়োজক সূত্র জানায়, জনমনে পরিচ্ছন্নতার উদাহরণ তৈরি করতেই প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে আগামী ১৫ থেকে ২০ ডিসেম্বর ৬ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে। এ প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বরূপ কুড়িয়ে পাওয়া এসব প্লাস্টিকের বোতলে তৈরি ১৯ ফিট বাই ৭১ ফিট নৌকা।

এছাড়াও প্রদর্শনীতে রয়েছে প্লাস্টিক বোতলের ঢাকনা দিয়ে তৈরি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানা রকমের অবয়ব।

আয়োজক সূত্র আরও জানায়, পরিচ্ছন্ন ঢাকা বিশেষ করে গোটা বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্নতার মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিডি ক্লিনের প্রায় ১৮ হাজার সদস্য দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পরিচ্ছন্নতায় নাগরিকদের সচেতন করতে বয়স ভুলে তাদের সঙ্গে একসুতোঁয় নিজেকে গেঁথেছেন উত্তরের নগর পিতা আতিকুল ইসলাম।

রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা ফেলতে বারবার যেমন আহ্বান জানাচ্ছেন তেমনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছেড়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। একবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে ঝাড়– দিতে চাই, আপনাদের সঙ্গে ড্রেন পরিষ্কার করতে চাই। এটাই হবে আমার বড় বড় সংবর্ধনা।’

জনবান্ধব এ নগর পিতা প্রায় ৯ মাস আগে রাজধানীর তেজগাঁও রেলক্রসিং সংলগ্ন মেয়র আনিসুল হক সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ডিএনসিসি আয়োজিত বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মর্মস্পর্শী এক বার্তা দিয়েছিলেন।

সেদিন তিনি বলেছিলেন ‘যে দেশ ৩০ লাখ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা, যে দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার শুয়ে আছে, সেই দেশের মাটিতে কীভাবে ময়লা ফেলি!’

বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ব্যতিক্রম একদিন ১৬ ডিসেম্বর। ব্যতিক্রমী সেই দিনটিতেই পূব আকাশে উদিত নব রবি বুলিয়ে দিয়েছিল কোমল পরশ। দেদীপ্যমান ও আলোকিত বিজয় দিবসের ৪৯ বছরে পা রাখছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নানা দিক উপস্থাপনে পারঙ্গম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’ এর উদ্যোগে জনমনে পরিচ্ছন্নতার উদাহরণ প্রতিষ্ঠাসহ প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সারাদেশ থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিকের বোতলের ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও নিজের বক্তব্যে নগরবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন তিনি।

নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মেয়র বলেছেন, ‘একটি প্লাস্টিকের বোতল বায়োডিজেবল করতে ব্যয় হয় ৪৫০ বছর। অর্থাৎ ৪৫০ বছর একটি বোতল আমাদের ক্ষতি করে। প্লাস্টিক আমাদের জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিচ্ছে। সূর্যের যে রশ্মিটা পড়ে এটাও ক্ষতিকর মানুষের জন্য। প্লাস্টিক প্রথমে খালে, এরপর নদীতে এবং নদী থেকে সমুদ্রে চলে যাচ্ছে।’

মেয়র আতিক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন থাইল্যান্ডে একটি মরা তিমি মাছের পেট থেকে ১৮০টি পলিথিন বের করা হয়েছে যা কিনা আমাদের সামুদ্রিক জীবন, আমাদের সামাজিক জীবন, আমাদের জীববৈচিত্র্য শেষ করে দিচ্ছে। প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন মেট্রিকটন প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়ছে। ২০৩০ সালে মাছের থেকে প্লাস্টিক বেশি হবে সমুদ্রে। সেই প্লাস্টিকের মধ্যে আমরা বসবাস করছি।

নগরী তথা বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ‘বিডি ক্লিন’ ইতিবাচক ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এ নগর পিতা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৯.৬ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক রয়েছে এই পৃথিবীতে। যার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করা যাবে। আর বাকীটা রিসাইক্লিং করা যাবে না।এটা আপনাকে আমাকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিন্তু ক্ষতি করে দিবে। আরেকটি ক্ষতিকর জিনিস হলো সিঙ্গেল ইউজ র‌্যাপিং পেপার। লন্ড্রিতে বড় বড় পলিথিনে করে কাপড় দিয়ে দেয়। বাজারে গেলে পলিথিন দিয়ে দেয়। এটা রোধ করতে হবে। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে এটা রোধ করবো।’

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন আমরা প্লাস্টিক যেন ব্যবহার না করি। সিটি করপোরেশন থেকে এটার বিকল্প কী ধরনের ব্যাগ আমরা দিতে পারি তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

আপনারা দেখেছেন ঢাকা এয়ারপোর্টে একটি পানির বোতলের দাম রাখা হয় ২০টাকা। তার সাথে আরও ৫টাকা জুড়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ বোতলটা দাম নিচ্ছে ২৫ টাকা। যদি আপনি খালি বোতলটা দোকানে ফেরত দেন তাহলে ৫টাকা ফেরত পাবেন।’

ঢাকা নগরীকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা পাট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে আমাদের এখানে আসতে বলেছি। এটা করা যায় কী না যে বোতলের দাম হবে এক টাকা বেশি। যদি বোতল ফেরত দেয় তাহলে তাকে ১ টাকা রিটার্ন করা হবে। এ ধরনের কনসেপ্টগুলো আমরা বাংলাদেশে করে দিতে চাই। এভাবে আমরা আমাদের শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত রাখতে পারবো।

‘লাল সবুজের বাংলাদেশ, ময়লাকে বলি না, দুষণের দিন শেষ’ এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বিডি ক্লিনের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এই বিজয়ের মাসে অঙ্গীকার করি যেন আমরা আমাদের দেশ, আমাদের শহর পরিষ্কার করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এ দেশ হবে সোনার বাংলাদেশ, এ সোনার বাংলাদেশ করতে গেলে সোনার ছেলে লাগবে।

আমরা দামী গাড়ি থেকে বোতল ফেলে দিই রাস্তায়, বাসা থেকে বোতল ফেলে দিই। আমরা বিদেশে গেলে কিন্তু ময়লা ফেলি না। দেশে এসেই ময়লা ফেলি। আমি মনে করি আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমি মনে করি আমাদের স্কুলে গরুর রচনার দিন শেষ। রচনা হতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার রচনা, নিরাপদ সড়কের রচনা, কিভাবে আমরা শহরকে পরিষ্কার করতে পারি এটার রচনা’ যোগ করেন নগর পিতা।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: আব্দুল হাই, ডিএনসিসি সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর এম মনজুর হোসেন, ড. মহিউদ্দিন সরকার, ড. আনজুমান বেগম, ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: নাছির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিডি ক্লিন

Posted by কালের আলো on Sunday, December 15, 2019

কালের আলো/এডিবি/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email