গাজীপুর সিটিতে বিএনপি বনাম জামায়াত, বিস্মিত বিএনপি

প্রকাশিতঃ 11:56 am | April 19, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

খুলনা সিটি করপোরেশনে না দিলেও গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামী। তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে ভোট করা সম্ভব নয় বলে দলটির নেতা প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।

জাতীয় পর্যায়ে দল দুটি সব জায়গায় একসঙ্গে লড়াই করলেও গাজীপুরে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হওয়া আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে গাজীপুরে।

জামায়াতের এমন কাজে বিস্মিত হয়েছে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় এবং গাজীপুরের নেতারা বলছেন, ২০ দলীয় জোটের সবশেষ বৈঠকে একসঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে কথা হয়েছিল। তারপরও জামায়াত গাজীপুরে প্রার্থী দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।

গাজীপুরে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী বলছেন, তাকে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে হবে, এমন কোনো নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে আসেনি। বরং তিনি মনে করেন বিএনপিই তাকে সমর্থন দিয়ে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে

আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াইয়ের দিকে দৃষ্টি থাকবে সারা দেশের। এর মধ্যে আগামী প্রথম পর্বে গাজীপুর ও খুলনায় ভোট হবে আগামী ১৫ মে।

এর মধ্যে গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থী করেছে হাসান উদ্দিন সরকারকে। তাকে মোকাবেলা করতে হবে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলমকে।

খুলনায় বিএনপি প্রার্থী করেছে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। তিনি মোকাবেলা করবেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেককে।

গাজীপুরে নিজেরা প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা। এই দিক দিয়ে কিছুটা হলেও বিএনপির জন্য বেকায়দা করে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

এখানে হাসান উদ্দিন সরকারের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত নেতা সানাউল্লাহ। তিনি প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন এবং সেটা বৈধও ঘোষণা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিধায় তার পক্ষে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন আগেই জমা দিতে হয়েছে।

সানাউল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার কারণে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারিনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার নিমিত্তে স¦তন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।’

জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা জোটের মধ্যে আছি, আলাপ আলোচনা চলছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা প্রত্যাশা করছি ২০ দল থেকে আমাদেরকে সমর্থন জানানো হবে।’

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সানাউল্লাহকে বসিয়ে দেয়ার বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা মনে করি ২০ দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষ থেকেই আমাদের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জোটের অন্য যারা ফরম তুলেছেন তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা আশা করি ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবেই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে। বিষয়টি খুব কঠিন বলে আমরা মনে করছি না।’

বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের ঐক্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। আশা করছি শিগগির অপর প্রার্থীরা বিএনপিকে সমর্থন দেবে।’

এর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে আটকে যাওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জামায়াত সেখানে প্রার্থী দিয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত ছিলেন সেলিম উদ্দিন।

জামায়াতের সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তরের পর গাজীপুরেও তাদের প্রার্থী দেয়ার উদ্দেশ্য বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সমর্থন আশা করে। আর এই লক্ষ্য নিয়েই আগাচ্ছে তারা।

২০ দলের নেতারা জানান, জোটের সবশেষ বৈঠকে গাজীপুরে জামায়াতের মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া নিয়ে চাপে ছিলেন বৈঠকে উপস্থিত জামায়াতের প্রতিনিধি আব্দুল হালিম। সেদিন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদেরকে জানানোর কথা বললেও জামায়াত সিদ্ধান্ত জানায়নি এখনও।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে ২০ দলের জোটগত প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জোটের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপরেও জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে গাজীপুরে প্রার্থী দিয়েছে। সেটি নিয়েও জোটের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে সময় চেয়েছে। এখন প্রয়োজনে আবারও তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হবে। তবে এটি নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’

শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থী যদি থেকেই যায় তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আলোচনা হচ্ছে। আশা করি সমস্যা থাকবে না। শেষ পর্যন্ত ২০ দলের প্রার্থী একজনই থাকবে আমরা আশা করি।’

জামায়াতের একজন নেতা বলেন, ‘গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা বিএনপিকে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব এখনও দেয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ কথা সত্য নয়। জোটের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শরিকরা সবাই জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন সেটাও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুতরাং এমন কথা সঠিক না।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এটা এক ধরনের কৌশল। তবে দেখবেন যথাসময়ে তাদের প্রার্থিতা শুধু প্রত্যাহার নয়, জামায়াতের প্রার্থী মঞ্চে এসে বক্তব্যও দেবেন।’

 

কালের আলো/এমএস

Print Friendly, PDF & Email